সুফল তর্কালঙ্কার: আমাদের আগামীকে এক উন্নত জীবনধারার পাঠ দিয়ে তাঁদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে কিছু মানুষ নীরবে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করে চলেছেন, আমাদের বঙ্গ সংস্কৃতির অঙ্গনে তাঁদের আগামীর পথকে প্রশস্ত ও মসৃণ করে তুলতে এই মানুষগুলি বদ্ধ পরিকর। সম্প্রতি দূরভাষ যন্ত্রে এমনিই এক মানুষ, আন্তরিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদিকা অন্তরা সিংহরায়ের আন্তরিকতায় মোড়া আমন্ত্রন এড়াতে না পেরে যথারীতি হাজির হতেই হয়েছিল রাঢ় বাংলার অন্যতম প্রধান শিল্পনগরী ভারতের রূঢ় পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে গত ৯ এপ্রিল অপরাহ্নে।
বাংলা নতুন বছর ১৪৩০-কে সাদর আহ্বান জানিয়ে নববর্ষের প্রাক্কালে মুখরিত হয়ে উঠেছিল আজকের কিশলয় আগামীর মহীরুহদের অংশগ্রহণে, উপস্থিত ছিলেন শিল্পাঞ্চলের বহু গুণী মানুষজন। অনুষ্ঠানের মঞ্চ সজ্জায় অভিনবত্বের ছোঁয়া লক্ষণীয়। এই মূহুর্তে যখন আমরা আমাদের বঙ্গ সংস্কৃতিকে পাশে সরিয়ে রেখে কিছুটা হলেও আপন করে নিচ্ছি অন্য সংস্কৃতির বিশেষ কিছু দিককে, সেই মূহুর্তে পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের শিক্ষিকা এবং আন্তরিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদিকা অন্তরা সিংহরায়ের প্রচেষ্টায় আগামী প্রজন্মকে বঙ্গ সংস্কৃতির অঙ্গনের সুবিশাল জগতকে পরিচিত করিয়ে দিতেই শিশুদের হাতে বানানো নানা সামগ্রী দিয়ে সজ্জিত মঞ্চ সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে।
শুধুমাত্র নববর্ষকে স্বাগত জানানো নয়, এদিনের অনুষ্ঠানের অন্যতম মুখ্য আকর্ষণ ছিল আন্তরিক সাহিত্য পত্রিকার পঞ্চম বর্ষের প্রথম সংখ্যার মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠান। বাংলা বছরের প্রথম মাস বৈশাখের আগমনকে স্মরণীয় করে রাখতে আন্তরিক সাহিত্য পত্রিকার এই অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল উপস্থিত সকল গুণীজনের অংশগ্রহণে এবং আমাদের আগামী প্রজন্মদের মনোমুগ্ধকর নৃত্যের তালে আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রা। রবি ঠাকুরের সংগীতকে সঙ্গী করে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা মেলে ধরেছিল অনুষ্ঠানের মূল কারিগর আন্তরিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদিকা অন্তরা সিংহ রায়ের বঙ্গ সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসার দিকটিকে।
মূল অনুষ্ঠান কক্ষে অনুষ্ঠান শুরুর প্রথমেও লক্ষ করা গেল এদিন অভিনবত্ব। প্রথাগত দিক মেনে শুভ কাজের প্রারম্ভে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনে বিশেষ অতিথিদের সঙ্গে দুই ক্ষুদের অংশগ্রহণ এককথায় অন্য মাত্রা এনে দিয়েছিলো আন্তরিকের এই অনুষ্ঠানকে। উপস্থিত হয়েছিলেন আন্তরিক সাহিত্য পত্রিকার সভাপতি অশোক সিংহরায়, ডঃ বাসুদেব হাজরা, অর্চনা সিংহরায়, উমা শঙ্কর সেন, শিবদাস রুদ্র, সুইটি রায়, গৌতম দাস, সমীরণ পাত্র, মধুসূদন রায়, তরুণ সাহা, চন্দ্রা পাঁজা, সহ বিশিষ্টজনেরা।
উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমবেতভাবে ষাণ্মাসিক আন্তরিক সাহিত্য পত্রিকার পঞ্চম বর্ষের প্রথম সংখ্যার আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন, নৃত্য, সঙ্গীত, কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, সমবেত সঙ্গীত, শ্রুতিনাটক সহ আলোচনা’র মালায় সাজানো হয়েছিল এদিনের দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান। লিটিল ম্যাগাজিন লাইব্রেরীর প্রতিষ্ঠাতা সদ্যপ্রয়াত সন্দীপ দত্ত’র স্মরণে একমিনিট নীরবতা পালন ও উপস্থিত সকলকে অনুষ্ঠানের ব্যাচ এবং অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া সকলে স্মারক, সর্বোপরি যে সকল শিশুশিল্পী এদিন প্রাণবন্ত অনুষ্ঠান উপহার দেয় তাঁদের অভিভাবিকাদের হাতে স্বর্গীয়া রাধারাণী স্মৃতি স্মারক তুলে দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে গেল আন্তরিক সাহিত্য গোষ্ঠী। অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে উপস্থিত হয়ে আন্তরিকের এই অনুষ্ঠানের এবং আন্তরিক সাহিত্য পত্রিকার দীর্ঘায়ু কামনা করেন দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রথম নাগরিক অনিন্দিতা মুখার্জী।
এদিন আন্তরিক সাহিত্য সম্মান প্রদান করা হয় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিশ্ব বঙ্গীয় সাহিত্য কলা অ্যাকাদেমী’র সভাপতি সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়কে। তাঁদের এই অনুষ্ঠানে প্রান্তিক সমাজের শিশুদের সমাজের মূল স্রোতে এগিয়ে নিয়ে আসার যে প্রচেষ্টা এদিন লক্ষ করা গেলো তা অভিনন্দনযোগ্য।
আন্তরিকতায় ভরা আন্তরিক সাহিত্য পত্রিকার পক্ষ থেকে উপস্থিত সকলকে বাংলা নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে যবনিকা পতন হয় ওই দিনের সান্ধ্য মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানটির। আন্তরিকের অনুষ্ঠান শেষে একরাশ ভালোলাগা নিয়ে অবশেষে ফিরে চলা নিজনিকেতনে।