গতকাল ২৩ আগস্ট ছিল বিপ্লবী ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য এর জন্মদিন ছিল, তাঁরই স্মৃতিতে নামাঙ্কিত কলকাতার আলিপুরে অবস্থিত রাজ্য পুলিশের হেড কোয়ার্টার ভবানী ভবনের এবং ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জয়িতা সরকারের কলমে
কথায় বলে, ” জীবনের মূল্য আয়ুতে নহে, কল্যাণপূত কর্মে”। পরিস্থিতি বা পরিণতির কথা চিন্তা না করে দেশ ও দশের স্বার্থে জীবন উৎসর্গ করেন যাঁরা ,তাঁদের অবদান কখনো ভুলে গেলে চলে না। অগ্নিযুগের সেই স্বল্পায়ু বিপ্লবীরা সমস্ত কিছু বিলিয়ে দিয়েছেন , ফাঁসির মঞ্চে জীবনের জয়গান গেয়েছেন। তাঁদের কর্মের পুণ্যফল লাভ করেছে দেশবাসী।পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রাজ্যপুলিশের হেড কোয়ার্টার বা সদর দপ্তর দক্ষিণ কোলকাতার আলিপুরে অবস্থিত ভবানীভবনের নামটি সবাই জানেন। কিন্তু নামের উৎস কি জানেন আজকের যুগের অধিকাংশ মানুষ? আসলে এই নাম যাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে রাখা হয়েছে, গতকাল ছিল তাঁর জন্মদিন। সেই ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য (২৩ আগস্ট, ১৯১৪-৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৫) ছিলেন পরাধীন দেশের এক নমস্য বিপ্লবী। অবিভক্ত বাংলার ঢাকা জেলার জয়দেবপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর পিতার নাম বসন্তকুমার ভট্টাচার্য। পূর্বে উল্লিখিত ভবানীভবনের নাম আগে ছিল Anderson Building/House. সেই জন অ্যান্ডারসন ছিলেন বাংলার একজন কুখ্যাত কড়া স্বৈরাচারী শাসক, অত্যাচারী গভর্ণর বা রাজ্যপাল। তাঁকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে বিপ্লবী দীনেশ গুপ্তের হাতে তৈরি বিপ্লবী ভবানীপ্রসাদ বন্ধু রবিরঞ্জন ব্যানার্জীর সঙ্গে দার্জিলিং যান, কারণ গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপনে সাহেবের দার্জিলিং যাবার কথা জানা গিয়েছিল ৷ ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার’- টিমের সদস্য ছিলেন ভবানী, যে দলের এক পৃষ্ঠপোষক ছিলেন স্বয়ং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। হত্যা পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন উক্ত দলের সুকুমার ঘোষ, উজ্জ্বলা মজুমদার (রক্ষিত রায়), রবীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। তাঁরাও কয়েকজন দার্জিলিং যান। কিছুদিন পর ১৯৩৪-এর ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে গেলে নিরাপত্তা বেষ্টনী এড়িয়ে অ্যান্ডারসনের একেবারে সামনে পৌঁছে সাহেবী পোশাক পরা ভবানী ও রবি রিভলভার থেকে গুলি করেন। কিন্তু কপাল খারাপ।সাহেব বেঁচে যান। তরুণ বিপ্লবীদ্বয় ধরা পড়েন এবং পুলিশের ভয়ংকর মারে তখনই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফিরতেই নাকি ভবানী বলে উঠেছিলেন, ‘ইজ অ্যান্ডারসন স্টিল অ্যালাইভ?’ মনোরঞ্জন ও উজ্বলাও ধরা পড়েন। আদালতের বিচারে তাঁদের ১৪ (মতান্তরে ২০)বছরের কারাদণ্ড হয়। ভবানীপ্রসাদ মাথা নত ক’রে অন্যায় স্বীকার করেননি। ১৯৩৫ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি রাজশাহি সেন্ট্রাল জেলে ভবানীপ্রসাদকে ফাঁসি দেওয়া হয়। দেশকে ভালোবেসে বাংলা মায়ের বীর সন্তান মাত্র ২১বছর বয়সেই হারিয়ে গেলেন মৃত্যুর জগতে।
ওই ইংরেজ শাসকের নামে আলিপুরে “অ্যান্ডারসন হাউস” স্থাপিত হয়েছিল। স্বাধীনতার প্রায় দুই দশক পরে ১৯৬৯ সালে বিভিন্ন মহল থেকে উঠে আসা জোরালো দাবির ভিত্তিতে এই বাড়িটির নাম বদলে “ভবানীভবন” হয়। আর ২০২০সালে পরিবারের বিশেষ আবেদনের পর সরকারি উদ্যোগে বিপ্লবীর আবক্ষ মূর্তি স্থাপিত হয়। জানি না কি সেই আগুন ,যার জোর বুকে নিয়ে দেশের জন্য ভবানীপ্রসাদের মতন স্বাধীনতা আন্দোলনকারীরা সর্ব স্বার্থ, এমনকি প্রাণও বিসর্জন দিয়েছেন।তাঁদের কথা বর্তমান প্রজন্মের সামনে সবসময় যথাযোগ্য মর্যাদায় উপস্থাপিত করা উচিত। প্রণাম জানাই হে বীর।