অনুভূতি কি বাধ্যতামূলক নাকি সম্পূর্ণ মানসিক?

আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন কবি, গল্পকার, যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী শঙ্খ সেনের সদ্য প্রকাশিত  দ্বিতীয় গ্রন্থ “অনুভূতি সংগ্রহ”  ও কবিকে নিয়ে কলম ধরলেন সংবাদ প্রতিখনের সম্পাদক স্বরূপম চক্রবর্তী

মানসিকতার গায়ের রং কী কালো না সাদা?
ঠিক ভূলের নেই তাই আজ মর্যাদা
বিবেকের নৈতিকতার নেই যে কোন রং
কালো ,মাখা মনের তেজ বেশি তবু বরং…..
মানসিকতাকে এমন সাবলীল ভাষায় সাধারণের সামনে তুলে ধরতে কলম ধরেছেন যিনি, তিনি বর্তমান সময়ের এমন এক পেশার মানুষ; যাঁর পেশার সঙ্গে তাঁর লেখনীর অন্তর অনেকটাই। তবে যে বিষয়টি উল্লেখযোগ্য সেটি, জন্মের পর থেকেই যে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তাঁর বেড়ে ওঠা, শৈশব, যৌবন অতিবাহিত, সেই পরিবেশ তাঁকে শিখিয়েছে নিজের কর্মক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েও কিভাবে সহজ সরল জীবন যাপন করে সাধারণের সঙ্গে মিশে সাধারণের কথা বলা যায়। সুযোগ্য পিতা-মাতার সুযোগ্য সন্তান হিসাবে আজ বিদেশের মাটিতে বসবাস করেও তিনি ভোলেন নি তাঁর দেশ তথা তাঁর জন্মভূমিকে, নিজের মাতৃভাষাকে। যাঁকে নিয়ে এই লেখা, তিনি এই বঙ্গের আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন যন্ত্র সঙ্গীত শিল্পী প্রখ্যাত স্বপন সেনের সুযোগ্য পুত্র শঙ্খ সেন।
নিজের ছাত্র জীবনের প্রতিটিই ক্ষেত্রে সুনামের সঙ্গে পথ চলার পরে কর্মজীবনেও ততটাই স্বার্থক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার শঙ্খ সেন কিন্তু সমানভাবে সফল ও সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখে এগিয়ে চলেছেন তাঁর লেখনীর সম্ভার নিয়ে। আত্মসুখ বর্জন করে সমগ্র মানব সভ্যতার প্রতি দায়বদ্ধতার কথা সহজ-সরলভাবে প্রতিফলিত করে তাঁর লেখা দুটি কাব্যগ্রন্থে জনসমক্ষে হাজির করেছেন শঙ্খ বাবু। শঙ্খ বাবুর লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থ “শঙ্খমঞ্জরী”, যেটির আত্মপ্রকাশ ঘটে ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী তিলোত্তমা কলকাতার বুকে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার আসরে।
সুদূর জার্মানীর স্টুটগার্ড শহরে বসবাস করেও আদ্যোপান্ত বাঙালি শঙ্খ সেন ইতিমধ্যেই কলকাতা থেকেই প্রকাশ করে ফেলেছেন কবিতা-গল্পের সংমিশ্রণে তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ “অনুভূতি সংগ্রহ”।
যেটিতে রয়েছে তাঁর মাতৃভাষা বাংলায় লেখা মোট ১৯ টি ও ১০ টি ইংরাজীতে লেখা তাঁর নিজস্ব অনুভূতি’র এক সংকলন, সঙ্গে রয়েছে শঙ্খ বাবুর লেখা একটি ছোট গল্প, যেটিও উনি হাজির করিয়েছেন ইংরাজী ভাষায়।
শুধুমাত্র কাব্য রচনা বা গল্পকার হিসাবেই যে তিনি নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন তা নয়, সুযোগ্য পিতার সুযোগ্য সন্তান হিসাবে যন্ত্র সংগীতের আকাশে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শঙ্খ সেন আজ এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
কবি শঙ্খ সেনের কলমে সহজেই পরিস্ফুটন ঘটে মানসিকতা, হিংসা, বিদ্বেষ ভূলে মান আর হুঁশের প্রয়োজনীয়তার কথা তাঁর লেখা মানসিক টানপোড়েন কবিতায়। যেখানে কবির কলমে উচ্চারিত হয়েছে—
“গাছপালা, জীবজন্তু…
কোথায় মান? কোথায় হুঁশ? বিষাদ ভরা এই পৃথিবীতে
বাঁচবে কোনটা?
মানসিকতা না হিংসা বিদ্বেষ?
বিবেচনার সীমানা পেরিয়ে আসবে কি সেই হুঁশ?”
আবার তিনি বলছেন –
“অমর থাক পরস্পরের ভালোবাসা বিদ্বেষ
সুকর্মের সুগন্ধটুকুই মিশে যাক মানুষিকতার হওয়ায়।”
আবার চক্ষু উন্মোচন কবিতায় কবি’র আবেগ প্রকাশ পায় –
আর কতদিন নীরব থাকিবে?
আর কতদিন চক্ষু বুজিয়া থাকিবে?
আর কতদিন উহারা অনাহারে মরিবে?
আর কতদিন উহারা গৃহহীন থাকিবে?
এই কবিতাতেই কবি বলেছেন মানবসেবার মাধ্যমেই যে প্রকৃত সুখ পাওয়া যায় তার বিকল্প কোনও কিছুর বিনিময়েই পাওয়া সম্ভব নয়। তাইতো এই কবিতায় কবি বলেছেন— “মানব সেবা ছাড়া কোথাও তুমি পূর্ণ সুখ পাইবে না।”
“অনুভূতি সংগ্রহ” গ্রন্থটি কবি শঙ্খ সেনের সম্পুর্ন নিজস্ব অনুভূতির বর্ণনা, যেগুলিকে তিনি একসূত্রে গেঁথে অনুভূতির অনন্য সুন্দর এক মালা রচনা করেছেন একথা বলাই যায়, যে গ্রন্থটি সংগ্রহে রাখার মত শুধু নয়, নিজের একান্তে নিজের মানসিক প্রতিচ্ছবি উপলব্ধি করতে গেলে সকলেরই একবার পড়া উচিত কবি শঙ্খ সেনের “অনুভূতি সংগ্রহ”।

error: Content is protected !!

Discover more from Sambad Pratikhan

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading