কলকাতা ছাড়িয়ে বনেদি বাড়ির পুজোর সুলুক সন্ধান

আমাদের এই বাংলার নানান প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে নানা প্রাচীন বনেদি বাড়ির ঐতিহাসিক দেবী আরাধনার ইতিহাস। আজ থেকে সংবাদ প্রতিখন আপনাদের জন্য নিয়ে আসছে সেই সকল বনেদি বাড়িগুলির দুর্গাপুজোর ইতিহাস।

লিখছেন কিশলয় মুখোপাধ্যায়।

আজ প্রথম পর্ব

গুড়াপের দে বাড়ির দুর্গাপুজো

কুমোরটুলির বিখ্যাত শিল্পী রমেশ পাল বলেছিলেন বাড়ির প্রাচীন পুজোর প্রতিমাতে সিংহের রং সাদা ও ঘোড়ার মতো মুখ হওয়ার কারণ হল কলকাতার চিরিয়াখানায় সিংহ দেখার আগে শিল্পীরা সিংহ গড়বে কী করে ? শ্রীশ্রী চণ্ডীতে রয়েছে হিমালয় সিংহ পাঠিয়েছেন। তাই সিংহের রং সাদা। আর ঘোড়ায় চেপে সবাই যুদ্ধ করে। মা দুর্গা অসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করছে তাই মাথাটা ঘোড়ার মতো। আর অসুর সবুজ হওয়ার কারণ অরন্যে বাস অসুরের। বনের রং সবুজ, তাই অসুরও সবুজ। এইরকম ঘোড়া মাথা মুখ সিংহ আর সবুজ অসুর দেখা যায় গুড়াপের দে বাড়ির দুর্গা প্রতিমায়। দুর্গা প্রতিমাটিও সুন্দর ও সাবেকি। প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এই  দে বাড়ির  দুর্গাপুজো দেখতে হলে হাওড়া বর্ধমান কর্ড শাখার গুড়াপ স্টেশনে নামতে হবে। এরপর টোটতে ১০/১৫ মিনিটে পোদ্দার পাড়ায় দেখা যায় এই প্রাচীন পুজোটি।

বৈষ্ণব মতে পুজো হয় তাই সূচনাকাল থেকে কোনওরকম বলি প্রথা নেই। এই সময় আখ, নারকেল, শশা, ছাঁচি কুমড়ো ও কলা প্রতিমার সামনে দড়ি দিয়ে ঝোলানো হয়। এই সন্ধিক্ষনে কাঁঠাল নিবেদন করা হয়।  এই প্রসঙ্গে পরিবারের এক সদস্য বললেন অনেকদিন আগে থেকে এই নিবেদনটি চলে আসছে। দে বাড়ির কূলদেবী  মহামায়ার স্বপ্নাদেশে অতীত কাল থেকে শুরু হয় এই প্রথাটি। দে পরিবারের দুর্গাপুজোয় রয়েছে ধুনো পোড়ানো ঐতিহ্যময় প্রথা। পরিবারের মহিলারা মাথায় মাটির সড়া নেন। তার আগে মাথায় গামছা বেঁধে মাথায় মাটির সড়া বসানো হয়। তাতে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত হতে থাকে। দুই হাতেও সড়া থাকে। সেই মহিলার কোলে তাঁর পুত্র বা নিকট আত্মীয় বালক বালিকা বসে। ধুনো পোড়ানোর মাধ্যমে মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা নিবেদন করা হয় পরিবারের মঙ্গলের জন্য।

সপ্তমীর দিন নতুন পুকুরে নবপত্রিকা স্নান করানো হয় আবার এই পুকুরেই প্রতিমা বিসর্জন হয়। দশমীর দিন হয় অপরাজিতা ফুলের পুজো। এই দিনই হয় কুমারী পুজো। সন্ধিপুজোর সময় ১০৮ টি প্রদীপ জ্বালানো হয়। রাতের এই সন্ধিক্ষনে আলোর এই অর্ঘ অনবদ্য লাগে। অতীত কাল থেকে নিষ্ঠা সহকারে দে পরিবার তাদের কূলদেবী মহামায়ার আরাধনা করে আসছে। পুজোর রীতি আর প্রতিমার কোনও বদল হয়েনি এতগুলো বছরের পরেও।

%d bloggers like this: