বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম গোলদাতা

এই মূহুর্তে চলছে ফুটবলের মহারণ, বিশ্বকাপ ফুটবল। ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম গোলদাতা ফ্রান্সের লুসিয়াঁ লোরেন (লুলু)কে নিয়ে কলম ধরলেন সংবাদ প্রতিখনের সাংবাদিক কিশলয় মুখোপাধ্যায়

১৩ জুলাই ১৯৩০ উরুগুয়ের রাজধানী মণ্টিভিডিউর এস্টিডিও পোকিটোস স্টেডিয়ামে প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপের প্রথম খেলা চলছে ফ্রান্স আর মেক্সিকোর মধ্যে। ১৯ মিনিটের মাথায় ফ্রান্সের ‘লুলু’ মেক্সিকোর জালে বল জড়ালেন। রেফারি লাম্বার্ডি গোলের বাঁশি বাজালেন। সবার প্রিয় লুলু,  পোষাকি নাম লুসিয়াঁ লোরেন হলেন বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম গোলদাতা। সেই ম্যাচে ফ্রান্স ৪-১ গোলে ম্যাচ জেতে।

লুসিয়াঁ স্মৃতিচারণে বলেছিলেন ‘তখন উরুগুয়ে শীতকাল, বরফ পরছিল। আমরা মেক্সিকোর বিরুদ্ধে খেলছিলাম। দলের একজন বলটিকে ‘সেন্টার’ করে আর আমি  গোল করি। আমরা সবাই খুশি হয়েছিলাম তবে আমরা খুব বেশি মাতামাতি করিনি। আমরা পরস্পর হ্যান্ডশেক ও অভিনন্দন জানিয়ে খেলায় মন দিলাম। তখন আমরা ঠিক বুঝতে পারিনি যে আমরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছি।’ সেদিন প্রায় ৪৪৪৪ জন দর্শক উরুগুয়ের সময় অনুযায়ি বিকেল ৩:১৯ মিনিটে একটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইলেন।

শতাব্দীর শেষ বিশ্বকাপ ১৯৯৮ সালে ফাইনাল ম্যাচে প্যারিসের স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন আর তাঁর দেশকে বিশ্বকাপ পেতে দেখলেন। তখন তাঁর বয়স প্রায় 90। ১৯৩০ সালে ফ্রান্স দলে যাঁরা বিশ্বকাপ খেলেছিলেন তাঁদের মধ্যে লুলুই দেখেছিলেন তাঁর দেশের বিশ্বজয়। এই বয়সেও ছিল অসাধারন স্মৃতিশক্তি। একবার তাঁর বাড়ি থেকে অনেক কিছু চুরি যায় তার মধ্যে ছিল সেই ম্যাচের জার্সিটি। তিনি মজা করে বলেছিলেন ‘আমার এই বুড়ো মস্তিস্কের এক কর্নারে সমস্ত স্মৃতি পাকা পোক্ত ভাবে রয়েছে। কেউ এই স্মৃতি চুরি করতে পারবেনা।’

প্রায় ১৫ দিন লেগেছিল উরুগুয়ে পৌঁছাতে। জাহাজে ফ্রান্সের সঙ্গে জলসফরে ছিল বেলজিয়াম, যুগোশ্লাভিয়া ও রোমানিয়ার দল। সকালে ডেকে জগিং করতেন আর সন্ধ্যায় সিনেমা দেখতেন। লুসিয়াঁর সঙ্গে সফরে ছিলেন জুলেরিমে। লোরেন বলেছিলেন তাঁর এই জলসফর ভালোই লেগেছিল। ১৯০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর প্যারিসের কাছে সেন্ট মোর দে ফঁসেতে জন্মগ্রহণ করেন। ফুটবল খেলা শুরু করেন ১৯২১ সালে। তিনিই অবশ্য একটু চুপচাপ ব্যাক্তি ছিলেন। নিজের সম্পর্কে কম বলতেন। প্রথম গোল করার তথ্যটি ভালো ভাবে জানা যায় ১৯৯০ সালে ইতালির  বিশ্বকাপে। সেই বিশ্বকাপে সাংবাদিক হিসেবে এসেছিলেন। এরপর ব্যাপক ভাবে দুনিয়ার সামনে তথ্যটি আসে ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপে। কিশোর বয়সে পার্সিং স্টেডিয়ামে ‘বলবয়’ রূপে হাজির ছিলেন। দেখেছিলেন তাঁর আইডল পল নিকোলাস আর গ্যামলিনের খেলা। সেখান থেকে শুরু করে বিশ্বকাপ খেলে শেষ দেশের হয়ে খেললেন ১৯৩৫ সালে মে মাসে হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে। ২০০৫ সালের ১১ এপ্রিল তাঁর জীবনাবসান হয়।

%d bloggers like this: