ভাদ্রে রেঁধে আশ্বিনে খাওয়া – অরন্ধনের গল্প

আত্রেয়ী দো: ‘অরন্ধন’ শব্দের অর্থ হল ‘বিনা রান্না’ অর্থাৎ রান্না করা নিষেধ। তবে ভোজনরসিক বাঙালিকে কি অরন্ধনের জালে আটকে রাখা যায়? তাই এই অরন্ধনও উৎসব হয়ে প্রবেশ করল বাঙালির জীবনে। অরন্ধন বছরে দুই বার পালন করা হয়। একবার পালন করা হয় সরস্বতী পূজার পরের দিন আর একবার এই বিশ্বকর্মা পূজার দিন। কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। তবে পিতৃপক্ষে এটাই বাঙালির শেষ উৎসব। সাধারণত,ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে এই পূজা হয়ে থাকে। এটি আসলে মহাদেবের মানসকন্যা মনসা দেবীর পূজা। এদিন রান্নার উনুনকে পূজা করা হয়। তাই এই দিন বাড়িতে রান্না করার নিয়ম নেই। পুজোর আগেরদিন রাত্রে সমস্ত ভোগ রান্না সেরে পরের দিন সেই ভোগ দেবীকে নিবেদন করা হয়। এই ‘অরন্ধন উৎসব’ অনেক জায়গায় ‘রান্না পুজো’ নামে পরিচিত। ‘রান্না পুজো’ শুনলেই প্রথমে মাথায় আসে পান্তা আর সাথে রকমারি রান্না। অঞ্চল বিশেষ নিরামিষ এবং আমিষ ভোগ আছে। তবে নিরামিষ আমিষের বিভেদ ভুলে পান্তাভাত, চালতা দিয়ে ডাল ,নারকেল দিয়ে কচু শাক আর বিবিধ শাক-সবজি ভাজা বহাল তবিয়তে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। আমিষ পদের ক্ষেত্রে ইলিশ ও চিংড়ির পদ অন্যতম। এছাড়াও বিভিন্ন মিষ্টান্ন যেমন তালের বড়া, ওলের বড়া, কলার বড়া,মালপোয়া ইত্যাদিও ভোগের থালায় সামিল থাকে। ভাদ্রের সংক্রান্তিতে রান্না সেরে,মনসা দেবীকে ভোগ নিবেদন করে পরদিন অর্থাৎ আশ্বিনে সেই প্রসাদ সবাইকে বিতরণ করা হয়। তাই বলা হয় ‘ভাদ্রে রেঁধে আশ্বিনে খাওয়া’।

শোনা যায়, রাঢ়বঙ্গে মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের সময়কালে মনসা পূজাকে দূর্গাপূজার মতো সমারোহে পালন করা হত। সেই সময় পূজায় বলির চল ছিল,তবে বর্তমানে তা বিলুপ্ত। এই পুজোর কদিন বাদেই আসে মহালয়া, দেবীপক্ষের সূচনা হয়। তারপরেই বাঙালি মেতে ওঠে বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব, দূর্গোৎসবে। রান্না পুজোর নিমন্ত্রণ বাঙালির মনে উৎসবের আমেজের সাথে সাথে আতিথ্যের ছোঁয়াও আনে।

ছবি: অর্জুন কাঁড়ার ও অনিমেষ মল্লিক গ্রাফিক: পথিক মিত্র

error: Content is protected !!

Discover more from Sambad Pratikhan

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading