২০০ বছরের সুপ্রাচীন কালী হাওড়ার আন্দুলের গুপ্তবাড়িতে

kaliঅপূর্ব গুপ্ত: সময়টা আজ থেকে ২০০ বছর আগের। হুগলি জেলার আরামবাগের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে হাওড়া জেলার আমতা থানার অন্তর্গত গাজীপুর গ্রামে বসবাস শুরু করেন স্বর্গীয় কবিরাজ মহেশচন্দ্র গুপ্ত, তখন গাজীপুর ছিল একটা গ্রাম যেটা বছরের ছ মাস জলে ডুবে থাকতো। বন্যাপ্রবন এলাকা হওয়ার কারণে এই এলাকার প্রধান পরিবহন ছিল সালতি অর্থাৎ ছোট নৌকো। আর অন্য সময়ে চলত গরুর গাড়ি, পালকী এসব যানবাহন। আর অন্য সময়ে গরুর গাড়ি, পালকী এসব ছাড়া চলাফেরা, মাল বহনের আর কোনো উপায় ছিল না। অবশ্য এসব আমি জানতে পেরেছি আমার কাকা স্বর্গীয় অসীম গুপ্তর কাছ থেকে। আমার দাদু স্বর্গীয় নগেন্দ্র নাথ গুপ্ত কবিরাজ ছিলেন। উনি গাজীপুর ছাড়াও অনেক জায়গায় রুগী দেখতে যেতেন। যাই হোক স্বর্গীয় মহেশবাবু একদিন কোনো এক জায়গায় রোগী দেখতে গিয়েছিলেন জল পথে। সেই সময় প্রায় গাজীপুর ও সংলগ্ন অঞ্চলের সব মেঠো রাস্তাই জলে ডুবেছিল। কি আর করা যাবে। বেশ রাত্রী, সালতিতে ফিরছিলেন। দুরন্ত দামোদর। পার হতে হবে। সে সময় এক ভদ্রলোক একটি এক ফুটের মতো একটি কালো কালীর মূর্তি নিয়ে উঠলেন। মহেশবাবু ওই ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি ওই কালীমূর্তি নিয়ে কি করবেন। তিনি এক অদ্ভুত উত্তর দিয়েছিলেন। বলেছিলেন তিনি মাঝে মাঝে কালী মূর্তি তৈরি করেন, পুজো করেন, পরে বিসর্জন করেন। তবে এবার প্রবল বন্যার কারনে আর পুজো করা হয়নি, দামোদরের জলে ভাসিয়ে দিতে এসেছেন। তখন মহেশবাবু ওই ভদ্রলোককে বলেন যদি আপত্তি না থাকে তাহলে তিনি নিজে ওই মূর্তিটি গ্রহন ও নিত্য পুজো করতে পারেন।  ওই ভদ্রলোক বিনা দ্বিধায় মাহেশবাবুকে মূর্তিটি দান করেন।  মহেশবাবুও যত্ন সহকারে মূর্তিটি গাজীপুরের মাটির বাড়ীতে নিয়ে আসেন ও নিত্য পুজো চালু করেন। তবে বিশেষ কোনো মন্দির ছিল না। আর কোনোদিনও ওই মূর্তিদাতা কে দেখা যায়নি। পরে মহেশবাবুর ছেলে স্বর্গীয় অক্ষয় কুমার গুপ্ত ওই ভাবেই  নিত্যপূজো করতেন। বলাবাহুল্য উনিও কবিরাজ ছিলেন। স্বর্গীয় অক্ষয়বাবুর এক ছেলে ও এক মেয়ে ছিলেন। kali.2 ছেলের নাম স্বর্গীয় নগেন্দ্র নাথ গুপ্ত। উনিও কবিরাজ ছিলেন। উনি ছিলেন আয়ুর্বেদাচার্য কাব্যব্যাকরণতীর্থ সাংখ্যশাস্ত্রী । ওনার নামডাক ছিল। উনি ছিলেন আমার দাদু। উনিও নিত্য ওই মূর্তিটির নিত্যাসেবা করতেন। উনিও মূর্তিটি নতুন রঙ করতে চেয়ে ছিলেন, কিন্তু কেন পারেননি আমার জানা নেই। দাদুর মৃত্যুর পরে সেভাবে আর কেউই কবিরাজ হননি। আমাদের একটা গাজীপুর আয়ুর্বেদিক ফার্মেসী প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি ছিল। আজ আর তার কোনো অস্তিত্ব নেই। কিছু নিদর্শন থাকলেও থাকতে পারে আমাদের গাজীপুরের বাড়ীতে। যাই হোক আমার বাবা স্বর্গীয় অনন্ত প্রসাদ গুপ্ত ছিলেন পেশায় শিক্ষক। বাবাকে নিয়ে আমরা সবাই গাজীপুরের বাড়িতে থাকতাম। তখন বাবাও নিজে বা ব্রাহ্মণ দিয়ে নিত্যসেবা করতেন। আমি সে সময়ে একবার ওই মূর্তির মুখ নতুন অবস্থায় কেমন ছিল স্বপ্ন দেখি এবং স্বপ্ন অনুযায়ী উলুবেরিয়া কালী বাড়ির মূর্তির সাথে মিল খুঁজে পাই। পরবর্তীকালে আমি অপূর্ব গুপ্ত গাজীপুর ছেড়ে কলকাতায় চলে আসি পড়াশোনার কারণে। পড়াশোনা শেষে  কলকাতার কাছাকাছি হাওড়ায় এক মেসে থাকতাম আর একটা কোম্পানির উচ্চ পদে চাকরি করতাম। ১৯৮৯ সালে আমার বিয়ের পর ১৯৯৬ সালে আমি হাওড়ার আন্দুলে নিজে একটি বাড়ি করি এবং স্বপরিবারে আন্দুলে পাকাপাকি ভাবে বসবাস শুরু করি। ওই সময়ে আমি যত্ন সহকারে ওই কালী মূর্তি আন্দুলে নিয়ে আসি। এখন আমার ভাই অনুপম গুপ্ত ওই মূর্তিটির নিত্যাসেবা করে। ১৯৯৭ সালে বাবার মৃত্যুর পর ১৯৯৯ সালে আমি ভগ্নপ্রায় মূর্তিটির সংস্কার করবো বলে মনস্থির করি কিন্তু পারিনি। কারনটা একটু আশর্য্যের। আমার স্ত্রী স্বপ্ন দেখে,  কেউ যেন বলছেন ওই মূর্তি সংস্কার করলে পারিবারিক ক্ষতির আশংকা আছে। সেই থেকে আমরা কেউ ওই মূর্তি সংস্কার করার সাহস পাইনি। এখনো ওই মূর্তি ভাঙ্গা অবস্থায় নিত্য সেবা করে থাকি।

ছবি: অন্তরা গুপ্ত 

advt-2

advt-3

FVADVT

advt-1

error: Content is protected !!

Discover more from Sambad Pratikhan

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading