ইডেনে রোহিতের অশ্বমেধের ঘোড়ার চালক কোহলি-জাদেজা

সুগত মুখোপাধ্যায়:  ২০০৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর এই মাঠেই পেয়েছিলেন একদিনের ক্রিকেটের প্রথম শতরান। আর ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর একই মাঠে একদিনের ক্রিকেটে সর্বাধিক ৪৯ শতরানের রেকর্ডের অধিকারী সচিন তেন্ডুলকরের রেকর্ডটিও স্পর্শ করলেন তিনি। ছোটবেলার আইডলের রেকর্ড স্পর্শ করে এখন নতুন ইতিহাস গড়ার পথে কিং বিরাট কোহলি। ধর্মশালায় নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাত্র ৫ রানের জন্য হাতছাড়া হয়েছিল শতরান। আর মুম্বাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৮৮ রান করে ফিরতে হলেও বিশ্বকাপের টেবিলে দুই নম্বরে থাকা দলের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলো বিরাটের ব্যাট। শেষপর্যন্ত ৩৫ জন্মদিনে স্বপ্নপূরণ বিরাটের । ১২১ বলে অপরাজিত ১০১ রানের ইনিংস খেলে দলের জয়ের ভিত গড়লেন তিনি। যোগ্য সঙ্গত দিলেন শ্রেয়স আয়ার (৭৭)।

আর বল হাতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাণ্ডব দেখালেন রবীন্দ্র জাদেজা। যুবরাজ সিংয়ের পর তিনি ভারতীয় স্পিনার হিসেবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মঞ্চে ৩৩ রানে ৫ উইকেট নিয়ে একদিনের ক্রিকেটে জীবনের সেরা বোলিং করে দলকে বিশ্বকাপে টানা ৮ ম্যাচে জয় এনে দিলেন। তাই ভারতের পাহাড় প্রমাণ ৫ উইকেটে ৩২৬ রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ৮৩ রানেই গুটিয়ে গেল প্রোটিস বাহিনী। তাই রবিবাসরীয় ইডেন দেখলো রোহিতদের ২৪৩ রানে জয়। ১৫ নভেম্বর মুম্বাইয়ে সেমিফাইনালে খেলতে নামার আগে রবিবার নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচটি খেলবে।

রবিবাসরীয় ক্রিকেটের নন্দনকানন ইডেনে যে একপেশে ম্যাচ হবে তা কেউ ভাবতে পারেনি। আসলে টসে জিতে যেভাবে মারকাটারি ব্যাটিং শুরু করেছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা তা দেখে আভাস পাওয়া গেছিল যে একটা হাই স্কোরিং ম্যাচ হতে চলেছে। মাত্র ২৪ বলে দুটি ছয় ও ছটি বাউন্ডারি মেরে ঝোড়ো ৪০ রান করে গেলেন রোহিত। ছয় ওভারের মাথায় তাই ব্যাট হাতে নামতে হয় কোহলিকে। দলের ৬২ রানের মাথায় রোহিত ও একাদশতম ওভারের মাথায় ভারত হারায় অপর ওপেনার শুভমন গিলের(২৩) উইকটটি। প্রথম ওভারেই মহারাজা উইকেট তুলে নিলেও স্পিন যাদুতে কাত করতে পারেননি কোহলিকে। এরপর শ্রেয়াসকে নিয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে দলের স্কোরবোর্ড সচল রাখেন কিং কোহলি। শ্রেয়স দুটি ছয় ও সাতটি চারের সাহায্যে ৮৭ বলে ৭৭ রান করে ফিরলেন। কোহলি অবশ্য বাড়তি কোন ঝুঁকি না নিয়ে সূর্যকুমার যাদব (১৪ বলে ২২) ও রবীন্দ্র জাদেজাকে (১৫ বলে অপরাজিত ২৯ ) নিয়ে দলকে ৫ উইকেটে ৩২৬ রানে পৌঁছে দেন।

সন্ধ্যার শিশির ভেজা উইকেটে রান তাড়া করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় এবং মহম্মদ সিরাজ তাঁর প্রথম ওভারেই কুইনটন ডিককে ফিরিয়ে দিতেই ইডেনে দেওয়ালির স্টেজ রিহার্সাল শুরু হয়ে যায়। এরপর বাঁ হাতের স্পিন যাদু দেখাতে শুরু করেন জাদেজা। তুলে নিতে থাকেন একের পর এক উইকেট। মহম্মদ সামি ৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে ১৮ রানে তুলে নিলেন দুই উইকেট। আর জাদেজা দ্বিতীয় ভারতীয় স্পিনার হিসেবে ৩৩ রানে ৫ উইকেট নিয়ে জয়ের ঠিকানা লিখে দিলেন। তাই রোহিতের অশ্বমেধের ঘোড়া এখন শুধু ছুটেই চলেছে। নরেন্দ্র মোদির শহরে ট্রফি জিতে থামবে রোহিতের এই দল। প্রশ্নটা এখন ঘোরাফেরা করছে সকলের মুখেই।

 

%d bloggers like this: