কলকাতা ছাড়িয়ে বনেদি বাড়ির পুজোর সুলুক সন্ধান

আমাদের এই বাংলার নানান প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে নানা প্রাচীন বনেদি বাড়ির ঐতিহাসিক দেবী আরাধনার ইতিহাস। আজ থেকে সংবাদ প্রতিখন আপনাদের জন্য নিয়ে আসছে সেই সকল বনেদি বাড়িগুলির দুর্গাপুজোর ইতিহাস। 

লিখছেন কিশলয় মুখোপাধ্যায়।

 আজ চতুর্থ পর্ব

গুড়াপের বুড়িমা চট্টোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গাপুজো

এই বাড়ির দুর্গাপ্রতিমার বাঁদিকে রয়েছেন সিদ্ধিদাতা গনেশ আর ডান দিকে বিরাজমান দেব সেনাপতি কার্তিক। কিন্তু নবপত্রিকা কার্তিক ঠাকুরের পাশে রয়েছে, স্থান বদল হয়েনি। দুর্গাপুজোয় চণ্ডীপাঠ হয়না। একাদশীর দিন দুপুর বেলা প্রতিমা বিসর্জন হয়। এই সকল রীতি মেনে অতীত কাল থেকে পুজো হয়ে আসছে গুড়াপ গ্রামে চট্টোপাধ্যায় বংশের ‘বুড়িমা’ দুর্গাপুজো। হওড়া বর্ধমান কর্ড শাখায় গুড়াপ স্টেশনে নেমে টোট চেপে ৫-৬ মিনিটে পৌঁছে যাওয়া যাবে এই বাড়িতে। কত বছরের পুরনো সেটা কেউ ঠিক করে বলতে পারেননা। তবে পরিবারের এক সদস্যের বক্তব্য অতীতে একটি পালি ভাষায় পুঁথি পাওয়া যায়। তার অর্থোদ্ধারের পর জানা গেল সেটি মালাকারদের পুজোর ফর্দ। অনেকদিন পুঁথিটি ছিল এখন নেই। সুতরাং বুড়িমা দুর্গা পুজো বেশ প্রাচীন।

কথিত আছে একটি ছোট্ট  মেয়ে একটি পঞ্চপত্রের বেল গাছ পুঁতেছিল। সেই সময় কোন উত্তর না দিয়ে চলে যায়। পরে মহামায়া স্বপ্নাদেশে নির্দেশ দেন যে তিনি নিজেই তাঁর বোধনের জন্য এই বেল গাছটি বপন করেছেন। আনুমানিক ১৩৪৭-৪৮ বঙ্গাব্দে বেল গাছটি ঝড়ে পড়ে যায়। তবে বোধন এখানেই হয় অতীত নিয়মে।

পরিবারের সদস্যদের কাছে কথা বলে জানা গেল শাস্ত্রে দিকশুদ্ধির নিয়মে গনেশ থাকেন পুরোহিতের ডান দিকে। দিক শুদ্ধির আগে গুরু প্রণাম হয় সেটি বাঁদিকে হয় তারপর হয় গনেশের প্রণাম। আর চণ্ডীপাঠ না হবার প্রসঙ্গে জান গেল এই বংশের কেশবলাল চট্টোপাধ্যায়ের ঠাকুমা মাতঙ্গিনী দেবী চণ্ডি পাঠ করতেন। মাতঙ্গিনী দেবীর পুত্রের অকালপ্রয়াণ ঘটলে তিনি বিধান দেন বাড়ির কেউ বা বাইরের কেউ পুজোয় কোনদিন  চণ্ডীপাঠ করতে পারবেন না।

আগে কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হত এখন ট্রেলারে করে নিয়ে গিয়ে বিসর্জন করা হয়।

%d bloggers like this: