আমাদের এই বাংলার নানান প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে নানা প্রাচীন বনেদি বাড়ির ঐতিহাসিক দেবী আরাধনার ইতিহাস। আজ থেকে সংবাদ প্রতিখন আপনাদের জন্য নিয়ে আসছে সেই সকল বনেদি বাড়িগুলির দুর্গাপুজোর ইতিহাস। লিখছেন কিশলয় মুখোপাধ্যায়।
আজ দ্বিতীয় পর্ব
শেওড়াফুলি রাজবাড়ির দুর্গাপুজো
সালটা তখন প্রায় ১৭৩২-৩৩, আঁটিসাড়া গ্রামে প্রজাদের জন্য পুকুর খনন চলছিল। প্রজাদের মঙ্গলের জন্য খনন কার্য করাচ্ছিলেন জমিদার মনোহর রায়। তিনি স্বপ্নে দেবী মহামায়াকে দেখতে পেলেন। আর খনন কার্য চলার সময় একটি পিতলের মুর্তি পাওয়া গেল। তৎকালীন বিশেষজ্ঞরা বলেন এটি হচ্ছে অষ্টধাতুর দুর্গামুর্তি। আর একেই জমিদার স্বপ্নে দেখেছিলেন। প্রতিষ্ঠা করলেন হুগলীতেই তাঁদের কাছারী বাড়ি অতীতের সাড়াফুলি বর্তমানের শেওড়াফুলিতে। শেওড়াফুলি রাজবাড়িতে মা সর্বমঙ্গলা রূপে পুজিত হতে থাকলেন। অষ্টধাতুর দুর্গা মুর্তি। সঙ্গে পরিবার অর্থাৎ লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ নেই। তবে মহিষাসুর রয়েছেন। আর রয়েছে ঘোটক রূপি সিংহ। দেখতে দেখতে ২৯০ বছর হয়ে গেল এই পুজোর। পঞ্জিকা মতে কৃষ্ণ নবমী থেকে কল্পারম্ভে পুজো শুরু হয়। এবারে ৮ অক্টোবর ছিল সেই শুভ দিন। শেওড়াফুলি রাজবাড়ির দুর্গাদালানে বসে সেই দিন রবিবার কথা হচ্ছিল আশীষ ঘোষের সঙ্গে। এই পুজোয় দুটি ঘট। একটি কৃষ্ণ নবমী থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত আর দ্বিতীয় ঘটটি ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত পুজো করা হয়। চণ্ডীপাঠ ৮ অক্টোবর রবিবার থেকেই পাঠ শুরু হয়ে গেছে।
এই বংশ আগে বর্ধমানের পাটুলিতে জমিদার ছিলেন। তবে সেই জমিদার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। মনহোর রায়ের ৫টি জেলাতে যখন জমিদারি ছিল তখন শেওড়াফুলিতে কাছারি বাড়ি তৈরি করেন। সেই থেকেই শেওড়াফুলিতে বসবাস। বর্তমানে এই রাজবাড়ির পুজোয় দুটো ভাগ রয়েছে। একটি বড় তরফের পুজো অপরটি হল ছোট তরফের পুজো।
এই পুজোয় দুটি বিশেষত্ব হচ্ছে অষ্টমীর দিন কুমারী পুজো হয়, কিন্তু ছোট তরফের পুজোতে কুমারী পুজো হয়না। আরেকটি হল দীর্ঘ ৮০ বছর কোন পশুবলি হয়না। হয় ছাঁচি কুমড়ো, আখ বলি। কিন্তু এটি বড় তরফের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ছোট তরফের পুজোতে এখনও পশুবলির প্রথা রয়েছে। এ বছর ছোট তরফ পুজোর দায়ত্বে রয়েছেন।
বর্ধমান জলার পাটুলির নারায়নপুরে এই পরিবারের রাজবাড়ি এখন আর নেই। এখানে প্রার ৬০০ বছরের একই রকম কষ্টিপাথরের দুর্গা মুর্তি পাওয়া যায়। এবং আরো কিছু দুর্গা মুর্তি যেমন বরাহ দুর্গা, আঠারো হাতের দুর্গা এরকম দুস্প্রাপ্য বিগ্রহ গুলি রয়েছে শেওড়াফুলি নিস্তারিণী কালী মন্দিরে। এই বিগ্রহ গুলিকে নিত্য দু বেলা পুজো করা হয়। নিস্তারিণী কালি মন্দির, রামারাজতলায় রাম সীতা মন্দির, গুপ্তিপাড়ায় রামচন্দ্র মন্দির এই রায় জমিদার প্রতিষ্ঠা করেন।
আগের জৌলুস হয়ত নেই। তবে রীতি নিতি, প্রথা একই রয়ে গেছে ১৫ জৈষ্ঠ ১১৪১ বঙ্গাব্দে প্রতিষ্ঠিত মা সর্বমঙ্গলা সূচনাকাল থেকে একই ভাবে পুজো পেয়ে আসছেন।