হাঁটুর অস্ট্রিও আর্থারাইটিস রোগে হাঁটু প্রতিস্থাপন কতটা কার্যকর? কী বলছেন প্রখ্যাত অর্থপেডিক ট্রমা সার্জেন ডাঃ অভীক রায়

স্বরূপম চক্রবর্তী: আজকাল আমরা সকলের কাছ থেকেই শুনতে পাই হাঁটুর যন্ত্রনা বিষয়ে। একটু দেখলে আমরা দেখবো ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৭৫ জন মানুষই আজকের দিনে হাঁটুর ব্যথার সমস্যায় ভুগছেন। এই প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গেলে আমাদের আগে জানতে হবে হাঁটুর এই অস্ট্রিও আর্থারাইটিস রোগটি আসলে কী? ডাক্তারবাবুরা কী বলছেন এই বিষয়ে? এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানতে আমরা কথা বলেছিলাম এই মূহুর্তে কলকাতার অন্যতম প্রখ্যাত অর্থপেডিক ট্রমা সার্জেন ডাঃ অভীক রায়ের সঙ্গে। আসুন দেখে নি হাঁটুর এই রোগ ও তার প্রতিকার বিষয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞ ডাঃ অভীক রায়।

হাঁটুর অস্ট্রিও আর্থারইটিস রোগ আসলে কী

হাঁটুর অস্ট্রিও আর্থারাইটিস রোগ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ডাঃ অভীক রায় প্রথমেই যেটা জানান সেটি হচ্ছে এই রোগটি হচ্ছে পুরোপুরো ডি-জেনারেটিং রোগ। আর এই রোগে প্রধানত আক্রান্ত হন বয়স্ক ব্যক্তিগণ। তিনি বলেন, হাঁটু হলো আমাদের শরীরের বড় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি অস্থিসন্ধি। আমাদের শরীরের ওজন বহন করা, হাঁটতে, সোজা হয়ে দাঁড়াতে, বসতে ও দৌড়তে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে হাঁটু। হাঁটুর হাড়ও কার্টিলেজ এর ক্ষয়ের ফলে হাঁটুর এই ক্ষয়বাত বা হাঁটুর অস্ট্রিও আর্থারাইটিস রোগ হয়। ডাক্তার অভীক রায় জানালেন, আমাদের হাঁটুতে তিনটি কমপারমেন্ট থাকে, এর মধ্যে যে কোনও একটি বা দুটি অথবা কখনও বা তিনটি কমপারমেন্টই আক্রান্ত হয়ে পড়ে এই রোগে।

ডাঃ অভীক রায় এই রোগ প্রসঙ্গে আরও জানান, মাটিতে ক্রস লেগ করে বসলে, বা খুব বেশি সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করার ফলেও এই রোগ হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত হলে যে সমস্ত লক্ষণগুলি দেখা যায় সেগুলি হলো হাঁটু ফুলে যাওয়া, হাঁটুর ব্যাথা, ভাল ভাবে হাঁটতে না পারা, হাঁটার সময় হাঁটুর ভিতর কটকট শব্দ, হাঁটু পুরো সোজা করা বা ভাঁজ করতে না পারা ইত্যাদি। এই রোগের প্রতিকারে যে যে বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন সেগুলি সম্পর্কে ডাঃ রায় বলেন, আমাদের প্রত্যেকের উচিত আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় পরিবর্তণ আনা। যেমন, মাটিতে না বসা বা সিঁড়ি দিয়ে খুব বেশি ওঠানামা না করা, এগুলো মানতে পারলে ডি-জেনারেটিং এই রোগের হাত থেকে রেহাই পাওয়াও সম্ভব।

এই রোগের চিকিত্‍সা

এই রোগের চিকিত্‍সা প্রসঙ্গে ডাঃ রায় জানান, প্রাথমিক অবস্থায় প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় পরিবর্তণ, হাঁটুর উপযুক্ত ব্যায়াম, ভিটামিক বি৩ ও ভিটামিন বি১২, ক্যালসিয়াম সঠিক পরিমাণে শরীরের জন্য প্রয়োজন। তিনি বলেন, খাদ্যাভাষের মাধ্যমে না হলে এইগুলির পরিপূরক ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে গ্রহন করতে হবে। এর সঙ্গে প্রয়োজন সঠিক ব্যায়াম।

অপারেশন কতটা কার্যকর এই রোগে

এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ডাঃ রায় বলেন, অপারেশন প্রয়োজন হয় সেই সময়ে যখন আর অন্য কোনও উপায় থাকে না। তিনি বলেন হাঁটুর এই রোগে সাধারণত দুটি অপারেশনের পদ্ধতি চালু রয়েছে এই রোগের প্রতিকারে। হাঁটুর তিনটি কমপারমেন্টের মধ্যে একটি কমপারমেন্ট আক্রান্ত হলে সেটিকে ইউনি কমপারমেন্টাল অপারেশন পদ্ধতি বলা হয়। এক্ষেত্রে, রোগীর আক্রান্ত ওই একটি কমপারমেন্ট এ কৃত্রিম কার্টিলেজে লাগিয়ে সরিয়ে তোলা হয় রোগীকে। অপর একটি পদ্ধতি হলো টোটাল নী রিপ্লেসমেন্ট পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে তিনটি কমপারমেন্টের মধ্যে দুটি বা তিনতিই আক্রান্ত হলে মেটাল এলয় ও কৃত্রিম কার্টিলেজ লাগিয়ে রোগীকে সরিয়ে তোলা হয়।

হাঁটুর অস্ট্রিও আর্থারাইটিস রোগে হাঁটুর অপারেশন বা নী রিপ্লেসমেন্ট কতটা সফল

এই বিষয়ে ডাঃ রায় বলেন, একশ শতাংশ সফল । আর এই অপারেশনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে রোগীকে হাঁটানো হয়। তিন দিন মাত্র হাসপাতালে থাকলেই হয়। স্বভিবিক নিয়মেই এর পর রোগী নিজে নিজেই সকল কাজ করতে সক্ষম হয় ও ধীরে ধীরে নিজের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যায়।

একসঙ্গে দুটি হাঁটুর অপারেশন কী সম্ভব

ডাঃ রায় বলেন, যদি রোগীকে পরীক্ষা করে ও রোগীর অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় পরীক্ষা করে সব ঠিক থাকে তাহলে অতি অবশ্যই যে কোনও রোগীর দুটি হাঁটুকে এক সঙ্গে অপারেশন করা সম্ভব ও সফলতার সঙ্গেই তা করা সম্ভবপর হয়।

%d bloggers like this: