ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ দিবসে ব্যাঙ্ক বেসরকারীকরণের প্রতিবাদ

নিজস্ব সংবাদদাতা: ভারতের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছিল ১৯৬৯ সালের ১৯ জুলাই। এইদিনই ভারতের তত্‍কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হাত ধরে জাতীয়করণ হয়েছিল ১৪টি ব্যাঙ্ক। এক কথায় এই ঘটনাকে বলা যায় স্বাধীন ভারতের প্রথম ও অন্যতম সফল আর্থিক সংস্কার। সেই সময় থেকেই প্রতিবছর ১৯ জুলাই দিনটি পালিত হয়ে আসছে ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ দিবস হিসেবে। বর্তমানে ভারতে সরকারী ব্যাঙ্ক গুলি ভারতের অর্থনীতিতে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের ৫৫ বছর পূর্তিতে বর্তমান ভারত সরকারের আর্থিক নীতি ও ব্যাঙ্ক বেসরকারীকরণের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে এবং ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের সুবিধা সম্পর্কে আলোকপাত করতে আজ কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিল অল ইন্ডিয়া ব্যাংক অফিসার্স কনফেডারেশন(আইবক)।

সম্মেলনে অল ইন্ডিয়া ব্যাংক অফিসার্স কনফেডারেশন(আইবক)এর পক্ষে অল ইন্ডিয়া ন্যাশনালাইজড ব্যাঙ্ক অফিসারস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় দাস বলেন, “এই ৫৫ বছরে সরকারি ব্যাংক দেশ গড়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে এসেছে। সবুজ বিপ্লব, মৎস বিপ্লব, দুগ্ধ বিপ্লব দেশবাসী কে খাদ্য উৎপাদনে স্বাবলম্বী করেছে। আজও সমান ভাবে সমস্ত সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়িত করে চলেছে। বর্তমান কেন্দ্র সরকার সাধারণ মানুষের কথা না ভেবে, পুঁজিপতিদের স্বার্থে ব্যাংক বিজাতীয়করণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে”। তিনি আরও বলেন, “গত ৫৫ বছরে একটি সরকারি ব্যাংক ও লালবাতি জ্বলা দূরের কথা বর্তমানে সব কটি সরকারি ব্যাংক লাভ করছে এবং সরকার কে ডিভিডেন্ড দিচ্ছে। ২০০৮ সালে সারা বিশ্ব ব্যাপী আর্থিক মন্দার সময় তাবড় তাবড় ব্যাংক যেমন লেহম্যান ব্রাদার্স, আমেরিকান ব্যাংক বা বর্তমান সময়ে যখন সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক, সিগনেচার ব্যাংক ও ক্রেডিট সুইস ব্যাংক তাসের ঘরের মতো পড়ে গেলো তখন বিশ্বের কাছে ভারতীয় ব্যাংকিং ব্যবস্থা তাদের সকলের  ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর থেকেও বোধহয় আমরা শিক্ষা নিতে পারিনি। যদি তাই হতো তাহলে ব্যাংক বিরাষ্ট্রীয়করনের কথা মন থেকে সরকার মুছে দিতেন। কারণ এটাই হলো পুঁজির ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণের সুফল অন্যথায় সংকটের সময় পুঁজি যদি নিয়ন্ত্রিত না থাকে তাহলে পুঁজিকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলে লাভের আশায়। আর এইটা করারই চেষ্টা চলছে। লাভজনক সংস্থাগুলোর ওপর সরকারী নিয়ন্ত্রণ সরিয়ে দিয়ে সেগুলোকে বাজার অর্থনীতির নিয়ন্ত্রকদের হাতে সঁপে দেওয়ার প্রচেষ্টার নাম ই হলো বিলগ্নিকরণ।”

“আমরা দেশের মধ্যেও ইয়েস ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক,  আইএলঅ্যান্ডএফএস, বা ডিএইচএফএল কে সমস্যার মধ্যে পড়তে দেখেও শিক্ষা নিলাম না। ডিএইচএফএল ব্যাংক কিভাবে ২,৬০,০০০ ফেক হাউজিং লোন একাউন্ট বান্দ্রা শাখা থেকে খুলে প্রধান মন্ত্রী আবাস যোজনা থেকে ১৮৮১ কোটি টাকা সাবসিডি হাতিয়ে নিয়েছে। টা অজানা নয়।

তাই শেয়ার বাজার কে বিদেশি লগ্নি পুঁজির দৌলতে উত্তরণ হতে দেখে উৎসাহিত না হয়ে দেশীয় ব্যবস্থা জোরদার করে ,রোজগার সৃজন করে, ব্যাংকের সংকোচন না  প্রসার করে , রাষ্ট্রীয় সংস্থা গুলোকে চাঙ্গা করে যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থান তৈরি করে , মুষ্টিমেয় পুঁজিপতিদের না,144কোটি ভারত বাসীর মুখে হাসি ফুটিয়ে যে উন্নয়ন সেই প্রকৃত সবকা সাথ সবকা বিকাশের জন্য আজকের পূণ্য দিনে আমরা শপথ নিতে চাই যে সরকারি সংস্থা বাঁচাও দেশ বাচাও।দেশের প্রথম ১০০ জন ধনী ব্যক্তির প্রাচুর্যের ভারত বর্ষ নয়, ১৪৪কোটি মানুষের সাধারণ ভাবে বেচেঁ থাকার ভারত বর্ষ চাই।”

%d bloggers like this: