ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের গপ্পো

আত্রেয়ী দো: বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে চারপাশের রকমারি লোভনীয় ফাস্টফুডের হাতছানি উপেক্ষা করা খুব কঠিন। আর এই চলতি ফাস্টফুডগুলির মধ্যেই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই একটি জনপ্রিয় নাম। সন্ধ্যের আড্ডায় গরম-গরম চা,কফি কিংবা ঠান্ডা-ঠান্ডা কোলড্রিঙ্কস ,সবকিছুর সাথেই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এর সখ্যতা বেশ উপভোগ্য। আজ এই ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়েরই দিন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক এই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এর খুঁটিনাটি গল্প।

১৩ই জুলাই দিনটি যুক্তরাষ্ট্রে ‘জাতীয় ফ্রেঞ্চ ফ্রাই দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। তবে,বর্তমানে এই দিনটি প্রতি বছর জুলাই মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার পালন করা হয়। নাম শুনে মনে হতেই পারে, এই খাবারের জন্মস্থল ফ্রান্স, কিন্তু আসল কাহিনীটি কিছুটা অন্যরকম।

আচ্ছা, এর নাম ফ্রেঞ্চ ফ্রাই হল কেন?

আলুকে সরু করে কেটে তাকে তেলে ভেজে রান্না করার পদ্ধতিকে ‘ফ্রেঞ্চিং’ বলা হয়। এই পদ্ধতিতে রান্না করা হয় বলেই এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফ্রেঞ্চ ফ্রাই’।

ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এর জন্ম নিয়ে রয়েছে নানান মতভেদ। অনেকের মতে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এর উৎপত্তিস্থল হল বেলজিয়াম। শোনা যায় বেলজিয়ামের বাসিন্দাদের মধ্যে মাছকে পাতলা করে কেটে ভেজে খাওয়ার প্রচলন ছিল। ১৭-১৮ শতকের শেষ ভাগে শীতকালে নদীর জল জমে বরফ হয়ে গেলে মাছের আকাল দেখা দেয়। তখন মাছের বদলে আলুকে পাতলা করে কেটে ভেজে খাওয়ার চল শুরু হয়। এভাবেই আবির্ভাব ঘটে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের যা একসময় বেলজিয়ামবাসীর কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন আমেরিকার সৈনিকরা যখন বেলজিয়ামে উপস্থিত হয় তাদেরকে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেতে দেওয়া হতো। সেই সময় সৈন্যদের অফিসিয়াল ভাষা ছিল ফ্রেঞ্চ বা ফরাসি ভাষা। আলু ভাজা করে তাদেরকে খেতে দেওয়া হয়েছে হয়েছিল বলে তারা সেটির নামকরণ করে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। বেলজিয়ামের ব্রুজেসের ফ্রিটমিউজিয়ামের কিউরেটর অধ্যাপক পল ইলেগেমস এর মতে স্পেনের আভিলার সেন্ট তেরেসা প্রথম ফ্রেঞ্চ ফ্রাই রান্না করেছিলেন এবং প্রমাণ হিসেবে তিনি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের খাবারে ভাজার ঐতিহ্যকে উল্লেখ করেন।

১৫৩৭ সালে পেনিস নাগরিক জিমেনেজ দে কুয়েসেডা এবং তার সঙ্গী সাথীরা কলম্বিয়া সফরে গিয়ে এক নতুন ধরনের আলুর সন্ধান পান। আকারে বেশ খানিকটা বড় হওয়ায় তারা এর নাম দেন ‘ট্রাফলস’। ঘটনার প্রায় কুড়ি বছর পর পেনে ওই প্রজাতির আলুর চাষ শুরু হয়। সেই সময় পাশাপাশি ইতালিতেও শুরু হয় ওই আলুর চাষ তবে তা সফলতা লাভ করেনি। আলোগুলি যেমন আকারে ছোট ছিল তেমনি ছিল স্বাদে তিতো।

আবার অনেকের মতে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এর জন্মস্থল ফ্রান্স। ১৭৭২ সালে, প্যারিসের মেডিক্যাল বিভাগের তরফ থেকে জানানো হয় আলু স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ। জানা যায় সেখানকারই একজন সেনাবাহিনীর চিকিৎসকের হাত ধরে ফ্রান্সে আলু প্রচলন হয় এবং ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করে। কিন্তু ১৭৮৫ সালের দিকে হঠাৎই ফ্রান্সে আলুর আকাল দেখা যায়। তখন সেখানকার অধিবাসীরা আলুকে পাতলা করে কেটে ভেজে খাওয়ার রেওয়াজ শুরু করেন। অনেকেরই মতে এখান থেকে এসেছে বর্তমানের ফ্রেঞ্চ ফ্রাই।

ফ্রেঞ্চ ফ্রাই তৈরির জন্য আলুর জোগান যেত যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ১৮০২ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন হোয়াইট হাউসে একটি নৈশভোজের আয়োজন করেন। এই অনুষ্ঠানেই খাদ্য তালিকায় সর্বপ্রথম ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের আত্মপ্রকাশ ঘটে। চার্লস ডিকেন্স তাঁর লেখা ‘আ টেল অফ টু সিটিস’ বইটিতে আলুর চিপসের উল্লেখ করে ইংরেজি সাহিত্যের সাথে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের পরিচয় করান। শুরুতে এই খাবারটির নাম ছিল ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়েড পটেটো। ১৯৩০ সালের দিকে পরিবর্তিত হয়ে নাম হয় ফ্রেঞ্চ ফ্রাই।ফ্লোরেন্সভিল-ব্রিস্টল শহর , কানাডার নিউ ব্রান্সউইক , ম্যাককেইন ফুডসের সদর দপ্তরকে ” বিশ্বের ফ্রেঞ্চ ফ্রাই রাজধানী ” বলে এবং এটি ‘পটেটো ওয়ার্ল্ড’ নামক আলু সম্পর্কিত একটি জাদুঘরও পরিচালনা করে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের জনপ্রিয়তা এতটাই যে সেখানকার একজন নাগরিক প্রতি বছর গড়ে প্রায় ২০-৩০ পাউন্ড ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেয়ে থাকেন। তবে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের জনপ্রিয়তা শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, ভারতেও বিশালাংশে ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে আলু ভারতীয় রন্ধনশৈলীতে একটি অন্যতম প্রধান উপাদান। ১৭ শতকের গোড়ার দিকে পর্তুগিজ নাবিকদের দ্বারা ভারতীয়দের সাথে আলুর পরিচয় হয়েছিল এবং ব্রিটিশদের দ্বারা এটির চাষ উত্তর ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল। এখন আলু দেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক ফসল।  মহারাষ্ট্রের ভাদা পাভ, বাংলার আলু পোস্তো, ​​দিল্লির চাট বা দক্ষিণ ভারতের দোসার সাথে পরিবেশিত তরকারিতে আলু ব্যবহার করা হয়। ভারতে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের প্রচলন হয় ব্রিটিশ রাজের সময় থেকে। ব্রিটিশ সৈন্যরা এই খাবারটি আমাদের দেশে চালু করেছিল। আজ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ভারতের একটি অন্যতম জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড। এটি প্রায়শই জলখাবার বা সান্ধ্যকালীন আড্ডায় স্ন্যাকস হিসাবে বা খাবারের সাথে সাইড ডিশ হিসাবে পরিবেশন করা হয়।

বিশ্বের নানান প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর মাঝে ম্যাকডোনাল্ডস সবচেয়ে বেশি ফ্রেঞ্চ ফ্রাই প্রস্তুত করে। বিশ্বের মোট বিক্রি হওয়া ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের ১/৩ অংশ ম্যাকডোনাল্ডস বিক্রি করে।

ভাজা-ভুজি মানেই একগাদা ক্যালোরি কিন্তু তা সত্ত্বেও ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এর জনপ্রিয়তায় বিন্দুমাত্র ভাঁটা পড়েনি। তাহলে আর কি টমেটো কেচাপ বা মায়োনিসের সাথে গরম গরম ফ্রেঞ্চ ফ্রাই প্লেটে তুলে নিন আর উদযাপন করুন আজকের দিনটি।

2 thoughts on “ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের গপ্পো

  1. আপনি তো দেখছি উচিত বানান তাই জানেন তাহলে কি আপনার কারোর উচিত অনুচিত নিয়ে কথা বলা উচিত??

  2. তথ্যে বেশ কিছু ভুল আছে৷ প্রতিবেদক এর উচিৎ খাবার এর ইতিহাস নিয়ে লেখার আগে আরো বেশী করে রিসার্চ করা। যে কোনো খাবার এর ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক থাকে সেদিকে সব কটা মতবাদ আলোকপাত করা উচিৎ। এবং ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এর আসল নাম ফ্রেঞ্চ ফ্রাই নয়, এটা অপভ্রংশ। প্রতিবেদক এর অবশ্যই উচিৎ ছিলো সে বিষয় নজর দেওয়া।

Comments are closed.

%d bloggers like this: