পিয়ালী সেন: “সে বড়ো সুখের সময় নয়, সে বড়ো আনন্দের সময় নয়”– কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের এই কথার রেশ টেনে আজ একটা বিষয়ে মনে হল কিছু কথার অবতারণা করা খুবই প্রয়োজন। বিশেষ করে, আমরা এই মূহুর্তে এমন এক সময়ের সন্ধিক্ষণে চলছি, যখন ধীরে ধীরে আমরা আমদের নিউক্লিয়ার পরিবার গুলোতে দেখতে পাচ্ছি পিতা-মাতা-সন্তানদের মধ্যে নানা বিষয়ে মতানৈক্য। যাঁর ফল ভোগ করছি আমরা যেমন, সঙ্গে সঙ্গে আগামী প্রজন্ম। আসলে এর জন্য আমরা অর্থাত্ বর্তমানের অভিভাবকরা নিজেদের দায়িত্ব এড়াতে পারি না।
একটা কথা আমরা শুনে এসেছি, সন্তানদের সবথেকে কাছের বন্ধু তাঁদের বাবা অথবা মা। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমরা নিজের আধুনিক হয়েছি বলে যতই জহির করি না কেন, আমরা কী প্রকৃতপক্ষে আধুনিক হতে পেরেছি। আচ্ছা আধুনিকতার অর্থ কী? শুধুই কী পোশাক-আষাক বা আদব-কায়দাতে আধুনিক হওয়াই আধুনিক হওয়া? মানসিক দিক থেকে আমরা কী সত্যি সত্যিই আধুনিক হয়েছি? নাকি, এখনও সেই প্রাচীন কালের সমাজের কিছু ঘুণধরা মানসিকতাকে আঁকড়ে ধরে আমরা এখনও বাঁচার চেষ্টা করছি।
যে প্রসঙ্গে এই লেখা, আজকাল অধিকাংশ বাবা-মা কিন্তু চেষ্টা করেন না তাঁদের সন্তান দের মনের কথা বুঝতে। তাঁর সর্বদাই চান তাঁদের সংতাংদের সমাজের বুকে সেরার সেরা হিসেবে গড়ে তুলতে। অসম এক ইঁদুর দৌড়ে তাঁরা তাঁদের সন্তানদের ঠেলে দিচ্ছেন এক ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে। যাঁর ফলস্বরূপ আমরা দেখতে পাই নানা অনভিপ্রেত ঘটনা।
এর হাত থেকে কিন্তু আমরাই পারি আমাদের আগামী প্রজন্মদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে। আমরা কী ভেবেছি, আমাদের সন্তান ঠিক কী চায়? কখনও আমাদের সন্তানদের সঙ্গে মিশতে পেরেছি বা পারছি কী বন্ধুর মত? বন্ধু শব্দটি কী শুধুমাত্র সমবয়সীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? একজন পিতা বা একজন মাতা কী তাঁর সন্তানের প্রকৃত বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন না। যদি পারেন তাহলে আজকের সমাজে ঘটে যাওয়া নানা ভয়াবহ ঘটনা ঘটে না। আমার নিজের কথা যদি বলি, আমার কন্যাই কিন্তু আমাকে এই আধুনিক সময়ের নানা আধুনিক ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে এবং বর্তমান সময়ের যোগাযোগের নানা মাধ্যম কিভাবে ব্যবহার করব তা শিখিয়েছে। আমার কাছে আমার কন্যা একাধারে আমার পুত্র- আবার একাধারে সে আমার কন্যা।
সম্পুর্ন নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি বর্তমান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আজকের অভিভাবকেরা যদি তাঁদের মানসিকতা একটু পরিবর্তন এনে নিজেদের সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে পারেন দেখবেন আমরা সংসারে সদা বিরাজ করবে এক অপরিসীম শান্তির বাতাবরণ। সন্তানরা যদি তাঁদের অভিভাবকদের নিজেদের বন্ধু হিসেবে ভাবতে পারে, তাহলে কিন্তু সমস্যাকে সমূলেই উত্পাটিত করা সম্ভবপর। একজন প্রকৃত বন্ধু হয়ে কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ এই বিষয়ে সঠিক ভাবে নিজেদের সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করে দেখুন আপনার সন্তান বিপথে পরিচালিত তো হবেই না, উল্টে আপনি যেটা চাইছেন অর্থাত্ আপনার সন্তান আগামীর একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে এই সমাজের বুকে মাঠ তুলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত্ করতে সক্ষম হবে।