অভিজিৎ হাজরা, হাওড়া: গ্ৰামীণ হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া মহকুমা তথা উলুবেড়িয়া থানার কুলগাছিয়ার চন্ডীপুর এলাকায় কলকাতা রবিনসন স্ট্রিট কান্ডের ছায়া দেখা গেল। দেখা গেল, মায়ের মৃতদেহ আগলে বসে আছে মৃতার ছোট ছেলে।চন্ডীপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে চন্ডীপুর – মানিকপুর এলাকায় পচা,দুগন্ধে অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল এলাকার বাসিন্দারা গত চারদিন ধরে।প্রথম দিকে স্থানীয়রা বুঝতে পারছিলেন না কোথা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।দুগন্ধে অতিষ্ট হয়ে স্থানীয়বাসীন্দারা দুগন্ধের সন্ধান করতে করতে হাজির হয় একটি বাড়ির সামনে।তারা সেই বাড়িতে থাকা লোকজনকে ডাকতে থাকেন। কিন্তু বাড়ির মধ্য থেকে কার কোন সাড়া শব্দ পান নি। এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা উলুবেড়িয়া থানায় খবর দেন। উলুবেড়িয়া থানার পুলিশ বাড়ির সামনে এসে ডাকাডাকি করলে ও ভিতর থেকে কারো ও কোন সাড়াশব্দ পান নি। পুলিশ কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে ছাদের চিলের কোঠা পেরিয়ে এসে এক বৃদ্ধার মৃতদেহ উদ্ধার করেন। মৃত মহিলার নাম আরতি বাগ।বয়স ৭২ বছর।জানা যায় মৃত ও মহিলা চন্ডীপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অবসরপ্রাপ্ত নাসিং স্টাফ। উলুবেড়িয়ার থানার পুলিশ ছাদের কার্নিশ ধরে চিলের কোঠা টপকে ঘরে প্রবেশ করে দেখেন, ঘরের মেঝেতে একটি ছেলে এক বৃদ্ধার পচা গলা মৃতদেহ আগলে বসে আছে। স্থানীয়রা জানান, ঐ ছেলেটির নাম সৌমেন বাগ।ও বৃদ্ধার ছোট ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সৌমেন বাগ ও তাঁর মা আরতি বাগ দুজনই অসুস্থ ছিলেন। সৌমেন বাগ কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন।মৃতা আরতি বাগ এর দুই ছেলে।বড় ছেলে সুকান্ত বাগ তার স্ত্রী-কে নিয়ে অন্যত্র থাকেন। সৌমেন মায়ের সঙ্গেই থাকত। সুকান্ত ও সৌমেন দুজনই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
এই প্রসঙ্গে মৃতার বড় ছেলে সুকান্ত বাগ বলেন, ” আমি মাঝে মধ্যেই মায়ের খোঁজ খবর নিতাম।রোজ মায়ের কাছে আসা সম্ভব হতো না। কয়েকদিন আগে আমি মায়ের খোঁজ নিতে এসেছিলাম। তখন কেউ দরজা খোলে না। আমি ও সেই সময় কাউকে কিছু বলি নি। আমি বাড়ি থেকে চলে আসি। তখন আমি বুঝতে পারি নি যে, এইরকম কিছু একটা ঘটেছে। আমার সংসার থাকার কারণে সব সময় মায়ের কাছে আসা, খোঁজ খবর নেওয়া সম্ভব ও হত না। আজকে শুনলাম এরকম ঘটনা ঘটেছে “।
এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এই প্রসঙ্গে স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, ” এই ধরনের ঘটনা তো এখন আমরা সংবাদপত্রে পড়ছি,দূরদর্শণে প্রায়শই দেখছি ।তবে এই ধরণের ঘটনা যে, আমাদের এলাকাতেই ঘটবে তা আমরা কল্পনাও করতে পারি নি।গত চারদিন ধরেই আমরা পচা – দুগন্ধ পাচ্ছিলাম।প্রথম দিকে আমরা মনে করেছিলাম, পাশের কোন ঝোপ – জঙ্গলে হয়তো কোন প্রাণী মরে পড়ে আছে।আর সেটা পচে দুগন্ধ ছড়াচ্ছে।সেই কারণে বিষয়টা আমরা অতটা গুরত্ব দিই নি। কিন্তু চারদিন ধরে এই রকম দুগন্ধ ছড়ানোয় আমরা শেষমেশ উলুবেড়িয়া থানার পুলিশকে দুগন্ধের কথা জানাই। তারপর পুলিশ আসে।দেখি, এই কান্ড”। উলুবেড়িয়ার থানার পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য উলুবেড়িয়া শরৎচন্দ্র মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে।