কিশলয় মুখোপাধ্যায়: পুরী বেড়াতে গিয়ে আমরা কজন ২৯ এপ্রিল ২০২৩ শনিবার বেড়াতে গিয়েছিলাম ‘নন্দনকানন জ্যুলজিকাল পার্ক বা নন্দনকানন চিড়িয়াখানা দর্শনে। আর ২৯ তারিখ ছিল বিশ্ব পশুচিকিৎসা দিবস। এপ্রিল মাসের শেষ শনিবার পালিত হয় এই ‘ওয়ার্ল্ড ভেটেরিনারি ডে’। এই দিবসকে সামনে রেখে নন্দনকানন কর্তৃপক্ষ দুটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সকালে চিড়িয়াখানার সামনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পশু চিকিৎসক বা ভেটরা তাদের পেশার নানা দিক আলোচনা করেন। জ্যু ম্যানেজমেন্ট, বন্য পশু পাখি উদ্ধার করে সুস্থ করে তোলা তথা পশু চিকিৎসার নানা দিক নিয়ে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। ২০২৩ সালের থিম ছিল পশু চিকিৎসা পেশার বৈচিত্র্য, এই পেশার ন্যায়, ও এই পেশায় অংশগ্রহণকে প্রচার করা। এই থিম নিয়েও আলোচোনা হয়। সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানে ১৪ জন পশু চিকিৎসককে তাঁদের কাজের অবদানের জন্য সন্মান জানানো হয়। যাঁরা নন্দনকাননের পশু ও পাখিদের যত্ন নিয়েছেন ও সুস্থ করেছেন।
আমরা ধৌলি শান্তি স্তুপ দেখে পৌঁছালাম নন্দনকানন চিড়িয়াখানা। এখানে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল সাফারি। আমাদের সঙ্গে একজন গাইড ছিলে়ন। বাসে চেপে সাফারি আমাদের সবচেয়ে ভালো লেগেছে। বাসের ভেতর আমরা আর পাশে বাঘ হাঁটছে। এরপর হরিণ, সিংহ, ভল্লুক দেখলাম। সবথেকে বেশি চোখে পড়ল ময়ুর। এই ‘বাস-সফর’ ব্যাপারটা আমাদের দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যর দারুণ লেগেছে।
এই পশু পাখিদের সুস্থ রাখতে একজন পশু চিকিৎসকের অবদান অনস্বীকার্য। ১৮৬৩ সালে জার্মানির হামবুর্গে বসেছিল ভেটেরিনারি কংগ্রেসের প্রথম সভা। ভেটেরিনারি কলেজ অফ এডিনবরা কলেজের অধ্যাপক জন গ্যামগি প্রথম সভার পৌরহিত্য করেন। অষ্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, ইংল্যণ্ড, জার্মানি, লুক্সেমবুর্গ, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, হাঙ্গেরি থেকে প্রায় ১০৩ জন ভেট চিকিৎসক এসেছিলেন এই সভায়। সভাপতি হয়েছিলেন ভেটেরিনারি স্কুল অফ স্টুটগার্ড কলেজের ডিরেক্টর এডওয়ার্ড হেরিং। এই ভাবে বিশ্ব ভেটেরিনারি কংগ্রেসের যাত্রা শুরু। ১৯৫৯ সালে বিশ্ব ভেটেরিনারি সংস্থা স্পেনের মাদ্রিদে প্রতিষ্ঠিত হয়। এবছর তাইপে শহরে ২৬-২৯ এপ্রিল বসেছিল বিশ্ব ভেটেরিনারি সভা। সহযোগিতায় ছিল তাওয়ানিস ভেটেরিনারি মেডিকেল সংস্থা।
১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত নন্দনকানন চিড়িয়াখানাটি ভূবনেশ্বর স্টেশন থেকে প্রায় ১৮ কিমি দূরে অবস্থিত। নন্দনকানন মূলত বিখ্যাত সাদা বাঘ, মেলিনিয়াস্টিক বাঘ অর্থাৎ এই বাঘের গায় ডোরাগাটাটি একটু মোটা ও বেশি। আর ভারতীয় প্যাঙ্গোলিন বা পিপিলিকা ভুক্ত বা বনরুই নামে খ্যাত প্রানীটির জন্যও নন্দনকাননের নাম আছে। এছাড়া বোটানিকাল গার্ডেনও দেখার মতো। এখানে ২৪টি বাগান রয়েছে। প্রজাপতি বাগান, গোলাপ বাগান প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এখানে প্রায় ৫৫ রকমের গোলাপ রয়েছে। আমরা বাস থেকে নেমে যখন হেঁটে চিড়িয়াখানা দেখছিলাম তখন সাদা বাঘের দেখা পেলাম তবে তিনি সেদিন আড়ালেই ছিলেন। বাকি বাঘেদের খুব কাছ থেকে দেখলাম। যাঁরা পাখি ভালোবাসেন তাদের জন্য রয়েছে ‘দেখবো পাখি তাইতো হাঁটি’। এই ওয়াক ফর বার্ড ওয়াচিং সফর শুরু হয় সকাল ৬:৩০ থেকে প্রত্যেক মাসের রবিবার। ২০ জন সদস্যদের একেকটি দলের পাখি চেনা ও জানা চলে ৯:৩০ পর্যন্ত। আসলে নন্দনকানন চিড়িয়াখানা রয়েছে অনেক কিছু দেখার ও জানার। নিজেের মনকে সমৃদ্ধশালী করে এই সফর। আর আমরা একটি ভালো দিনেই নন্দনকানন চিড়িয়াখানা বেড়ালাম। বলতে গেলে বেড়ানো একশোয়ে একশোয়। সুপারহিট নন্দনকানন-ভ্রমণ।