দিপান্বীতা: আমাদের সকলের রান্নাঘরে এই উপাদানটি থাকবেই, আর এটি ছাড়া রান্নাঘরের মশলার ভান্ডার পরিপূর্ণ রূপ লাভ করে না। আজ আমরা যে বীজটিকে নিয়ে আলোচনা করবো সেটির বৈজ্ঞানিক নাম NIGELLA SATIVA LINN। আর বাংলায় আমরা এটিকে বলে থাকি কালোজিরা বা কালোঞ্জি। এহেন কালোজিরাকে নানা জায়গায় নানা নামে বলা হয় যেমন কালো কেওড়া, রোমান ধনে, নিজেলা, হাব্বাসটুসউড ও ফিনেল ফ্লাওয়ার। শতনামের অধিকারী না হলেও কালোজিরার উপকারিতা কিন্তু শতগুন। মানব শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ও উপকারি এই বীজটির বিষয়ে আজ আপনাদের কিছু তথ্য জানাতেই এই লেখার উপস্থাপনা।
কালোজিরা, নামটি ও বীজটি যতোই কালো হোক না কেন, গুনের দিক থেকে কালোজিরা অনন্য। আসুন দেখে নেওয়া যাক মানব শরীরের কি কি উপকারে লাগে আমাদের রান্নার এই উপকরণটি। ফসফেট, ফসফরাস ও লৌহের সংমিশ্রনে গঠিত এই বীজ মূলত মানব দেহে ক্যানসার সহ নানা রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। এই কালোজিরার আদি নিবাস কিন্তু পূর্ব ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়ায়। স্মরণ শক্তি বাড়াতে একচামচ পুদিনা পাতার রস বা কমলালেবুর রসের সঙ্গে এক চা চামচ কালোজিরার তেল আমাদের মস্তিষ্কের রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে স্মৃতি শক্তি বিকাশে বিশেষ সাহায্য করে।
যাঁরা মাথা ব্যাথায় কষ্ট পাচ্ছেন তাঁরা হাফ চামচ কালোজিরার তেল মাথায় লাগালে উপকার পাবেন। এছাড়া বাতের ব্যাথা, নানা প্রকারের চর্মরোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে, শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে, অর্শ রোগের নিরাময়ে, হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট থেকে রেহাই পেতে, মধুমেহ রোগের হাত থেকে বাঁচতে, মেয়েদের অনিয়মিত মাসিকের ক্ষেত্রে, মানব দেহে ত্বককে সুন্দর করতে, আমাশয় রোগ সারাতে, লিভারের নানা সমস্যায় অতি প্রয়োজনীয় উপাদান কালোজিরা। একগ্রাম কালোজিরায় প্রায় ২০৮মাইক্রোগ্রাম প্রোটিন, ১৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি ১, ৫৭ মাইক্রোগ্রাম নিয়াসিন, ১.৮৫ মাইক্রোগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১০৫ মাইক্রোগ্রাম আয়রন, ৫.২৬ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ১৮ মাইক্রোগ্রাম কপার, ৬০ মাইক্রোগ্রাম জিঙ্ক ও প্রায় ৬১০ আই ইউ ফোলাসিন থাকার কারণে কালোজিরা আয়ুর্বেদিক, কবিরাজি ও ইউনানি চিকিৎসায় নানা রোগের নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়।
আমরা অনেকেই প্রায়শই দাঁতের ব্যথায় কষ্ট পাই। দাঁতের ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে অল্প গরম জলে কিছুটা কালোজিরা ফুটিয়ে সেই জল দিয়ে কুলকুচি করলে উপশম পাওয়া যেতে পারে। গবেষকদের মতে কালোজিরায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-মাইকেটিক প্রভাব থাকার কারণে এটি বোনম্যারো ও শরীরের প্রতিরক্ষার কোষগুলোকে উত্তেজিত করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও বৈজ্ঞানিকদের মত হলো কালোজিরা শরীরের খারাপ কলেস্টোরল কমাতে বিশেষ ভূমিকা নেয়।
তবে সকল কিছুরই যেমন উপকারিতা আছে তেমনি রয়েছে অপকারিতাও। কালোজিরা সেবন কখনই অধিক মাত্রায় বাঞ্চনীয় নয়। এছাড়া গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কালোজিরা সেবন গর্ভপাতের সম্ভাবনা থেকেই যায়। আবার বহুদিন ধরে কালোজিরা খেতে থাকলে বুক জ্বালা, চামড়ায় জ্বালা, বমিবমি ভাব ইত্যাদি সমস্যায় পড়তে পারেন। মনে রাখবেন কৃত্রিম বা বহু পুরোনো কালোজিরার তেল কখনোই ব্যবহার করা কাম্য নয়। কারন তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।