চন্দনযাত্রায় পুরী

কিশলয় মুখোপাধ্যায়: পবিত্র তীর্থধাম হল পুরীর জগন্নাথ মন্দির। বৈশাখ মাসের অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকে শুরু হয়েছে চন্দন যাত্রা উৎসব।পুরীর এই জগন্নাথ ধামে ৪টি মহৎসোব হয় যথা চন্দন যাত্রা, স্নান যাত্রা, রথ যাত্রা আর দোল যাত্রা । চন্দন যাত্রার দিন থেকেই শুরু হয় রথ তৈরির কাজ। চন্দন যাত্রা মোট ৪২ দিনের। এর মধ্যে প্রথম ২১ দিন বাহির চন্দন ও পরের ২১দিন হয় ভিতর চন্দন উৎসব । এই চন্দন যাত্রা বা গন্ধ লেপন যাত্রা বলতে সবাই বাহির চন্দনে বোঝায়। কারন সেটি দেখা যায় আর অনেক পূণ্যার্থী এই বাহির চন্দন বা গন্ধ লেপন যাত্রার সাক্ষী থাকেন প্রতি দিন, ২১দিন অর্থাৎ অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকে জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্ল অষ্টমী তিথীতে।

যেদিন আমরা প্রভু জগন্নাথদেব, বলভদ্র আর সুভদ্রার দর্শন করলাম অর্থাৎ ২৮ এপ্রিল ছিল একটি বিশেষ দিন। বলা যায় এই দিনই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। এই কথাই বললেন এই মন্দিরের পাণ্ডা চন্দ্রশেখর খুন্তিয়া। তিনি এই মন্দিরের ইতিহাস এই উৎসব সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানালেন। আর বললেন আপনারা খুব ভালোদিনেই এসেছেন। আমরাতো জানতামনা। সত্যি এ প্রভুর লীলা। জয় জগন্নাথ। অনেকেই জানেন এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন। তিনি এই বৈশাখ মাসের গরমে প্রভুর কষ্ট সহ্য করতে পারছিলেন না। প্রভু স্বপ্নাদেশে জানালেন বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষে অক্ষয় তৃতীয়া নামে যে তিথি আছে সেদিন আমার অঙ্গে সুগন্ধী চন্দনের প্রলেপ দেবে।

সেই দিন মন্দির দেখর সময় দেখলাম পাল্কি রাখা আছে। প্রস্তুতি চলছে। এই চন্দন যাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় নরেন্দ্র সরোবরে বা চন্দন পুকুরে। এই গন্ধলেপন উৎসবে প্রভু জগন্নাথদেবের প্রতিনিধি থাকেন মদনমোহন আর থাকেন দেবী লক্ষ্মী ও দেবী সরস্বতী,  রাম-কৃষ্ণ এবং পাঁচজন মহাদেব,  তাঁরা হলেন লোকনাথ, যমেশ্বর, কপালমোচন ,মার্কেণ্ডেশ্বর ও নীলকন্ঠেশ্বর। এই উৎসবে যে যাত্রা হয় সেখানে পথের মাঝে ছায়ামণ্ডপ থাকে। সেখানে এসে খানিক বিশ্রাম নেন প্রভু, করেন জলযোগ আর শোনেন ভক্তি গীতি। দুটি সুসজ্জিত নৌকার একটিতে মদনমোহন, দেবী লক্ষ্মী ও দেবী সরস্বতী আরোহণ করেন। আর অন্য নৌকায় পঞ্চ মহাদেব ও রাম-কৃষ্ণ অর্থাৎ শ্রীরাম আর শ্রীকৃষ্ণ। চন্দন পুকুরের মাঝখানে ৩টি মন্দির রয়েছে এর মধ্যে বৃহত্তম মন্দিরে অবস্থান করেন মদনমোহন,  দেবী লক্ষ্মী ও দেবী সরস্বতী। দ্বিতীয় মন্দরে শ্রীরাম ও শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহ,এবং তৃতীয় মন্দিরে পঞ্চ শিব। এই সময় মন্দির ও সরোবর আলো দিয়ে সাজানো হয়। সেই দিনের উৎসব শেষ হলে পালকি করে মন্দিরে প্রভু ফিরে আসেন।

উল্লেখ করা যায় মাঘ মাসের বসন্ত পঞ্চমীর দিন শুরু হয় রথ তৈরির জন্য কাঠ সংগ্রহ। এবং অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকেই শুরু হয় রথ তৈরি আর শুরু হয় চন্দন যাত্রা উৎসব।

%d