কিছুটা আক্ষেপ নিয়েই না ফেরার দেশে ভারতীয় ফুটবলের ‘বলরাম’

কিশলয় মুখোপাধ্যায়: গতকাল আমরা হরিয়েছি ভারতীয় ফুটবলের স্বর্ণযুগের তিন ত্রয়ীর অন্যতম তুলসিদাস বলরামকে। তাঁর নশ্বর দেহ তাঁর হুগলির উত্তরপাড়ার বাসভবনে নিয়ে আসার পর উত্তরপাড়া পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের পক্ষ থেকে যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করে গান স্যালুট ও গার্ড অফ অনার প্রদর্শন করা হয়। কিম্বদন্তী এই ফুটবলারের শেষযাত্রায় সঙ্গী ছিলেন অতীত দিনের বেশ কিছু ফুটবলার  ও স্থানীয় ব্যক্তিত্বরা।

সময়টা ১৯৬২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, এই দিনটিকে ভারতীয় ফুটবলে সোনার দিন বলা যায়। এই দিন ভারত দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে এশিয়ান গেমসে ফুটবলে সোনা পায়। আর এই দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তৎকালীন এশিয়ার অন্যতম ফুটবলার তথা এশিয়ার সেরা ‘হেডার’ তুলসিদাস বলরাম। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি পাড়ি দিলেন না ফেরার দেশে।

 

এই জাকার্তা এশিয়াডে যাওয়াই হতোনা বলরামের। সেই সময় ফুটবল দলটি হায়দরাবাদ থেকে কলকাতা হয়ে জাকার্তা যায়। কলকাতায় ফ্লু তে আক্রান্ত হলেন তুলসীদাস বলরাম। দলের কোচ ছিলেন রহিম সাহেব। এই রহিম সাহেবই বলরামকে আবিস্কার করেছিলেন। তিনি খবরটি জানতে পারেন ইষ্টবেঙ্গল ক্লাব মারফত। তখন সুকুমার সমাজপতির কথা ভাবা হলেও চুণী গোস্বামী ও পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শে তুলসীদাস বলরামকে দলে রাখেন। বাকিটাতো ইতিহাস। তখন বলা হত চুণী পিকে বলরাম ত্রয়ী। কলকাতায় সাফল্য লাল হলুদ ইষ্টবেঙ্গলে। তবে মজার কথা হল ছোট বেলায় নিজে যে টিম তৈরি করেছিলেন তার জার্সির রঙ ছিল সবুজ আর মেরুন। ১৯৩৬ সালে ৪ অক্টোবর এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া তুলসীদাস বলরামের বাড়িতে চাইত ফুটবল না খেলে পড়াশোনা করে চাকরি করুক। তবে ‘ তুলসী’ মজে থাকতো ফুটবলে। তাঁর ফুটবল স্বপ্নের রঙ ছিল সবুজ মেরুন।

হায়দরাবাদ দলের হয়ে সন্তোষ ট্রফিতে অসাধারণ খেলার সুবাদে তিনি ১৯৫৬ সালের মেলবোর্ন অলিম্পিকের ভারতীয় দলে সুযোগ পেলেন। তিনি প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন ১৯৫৬ সালের ৪ ডিসেম্বর মেলবোর্ন অলিম্পিকের সেমিফাইনালে। প্রতিপক্ষ ছিল যুগোস্লাভিয়া। মেলবোর্ন অলিম্পিক থেকে ১৯৬২ এশিয়াড টানা ৬ বছর জাতীয় দলে নিয়মিত খেলেছেল। ছিল ঈর্ষনীয় সাফল্য। আর ইষ্টবেঙ্গলেও দারুন সাফল্য পেয়েছিলেন। জিতিয়েছেন অজস্র ট্রফি। তবে মাত্র ২৭ বছর বয়সেই খেলা থেকে অবসর নিতে বাধ্য হন  তিনি। তা না হলে তৎকালীন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা বলেন  পার্ক জি সাং,  শিনজি কাগওয়া যাঁরা ইংলিশ ফুটবলে খেলেছিলেন তাদের পাশে নাম থাকতো তুলসীদাস বলরামের। অভিমানে তিনি লাল হলুদ দল ত্যাগ করে যোগ দিয়েছিলেন বি এন আরে। আবার এই ইষ্টবেঙ্গল ২০১৩ সাল নাগাদ ফের দ্বিতীয় বার পদ্মশ্রী পুরস্কারের জন্য আবেদন করেছিলেন তবে বাস্তব রূপ পায়েনি। পেয়ে়ছেন অনেক পুরস্কার। তবে শেষ জীবন পর্যন্ত পদ্মশ্রী না পাওয়ার আক্ষেপ ছিল।

তিন ‘ত্রয়ী’ না ফেরার দেশে। আর তুলসী দাস বলরামের রয়ে গেল অভিমান, কিছুটা আক্ষেপ, ১০ টি আন্তর্জাতিক গোল, ১০৪ টি ক্লাব স্তরের গোল আর এশিয়ার অন্যতম ফুটবলারের শিরোপা।

error: Content is protected !!

Discover more from Sambad Pratikhan

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading