মোমো কাহিনী

আমাদের সকলেরই মোমোর নাম শুনলেই মনে হয় একটু টেস্ট করেই দেখিতিব্বতের এই খাবারটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করলেন সংবাদ প্রতিখনের সাংবাদিক আত্রেয়ী দো

সন্ধ্যাবেলায় স্ট্রিট ফুড খাওয়ার জন্য মনটা আনচান করছে?  ওদিকে আবার গ্যাস-অম্বলের চিন্তায় ভাজাভুজি থেকেও হাত গুটিয়ে নিতে হচ্ছে?  তাহলে আর চিন্তা না করে ঝটপট কাছাকাছি মোমোর স্টল থেকে এক প্লেট মোমো কিনে উদরপূর্তি করেই ফেলুন। পেট ও মন দুইই যে আপনার প্রতি প্রসন্ন হবে তা বলাই বাহুল্য। শুধু তাই নয়, মোমোর দাম শুনেও কিনবো কি কিনবোনার সংশয় থাকবেনা। একবার কল্পনার রাজ্যে গিয়ে ভাবুন, শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়ের কোলে বসে হাতের কাছে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা গরম কফি আর এক প্লেট গরম গরম মোমো পেয়ে গেলেন। স্বর্গীয় সুখানুভূতি কাকে বলে, তা আর বোধকরি বুঝতে অসুবিধা হবে না।  এবার তাহলে আমার আপনার সকলের প্রিয় এই মোমোর কিছু না জানা কাহিনী জেনে নিই চলুন।

ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়,  মোমোর জন্মস্থান তিব্বত। শোনা যায় তুলাধর জাতির মধ্যে সর্বপ্রথম মোমো জনপ্রিয়তা লাভ করে। তারপর প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভূটান ঘুরে ভারতের রান্নাঘরে প্রবেশ করে মোমো।মোমো শব্দটি চৈনিক শব্দ। তিব্বতি ভাষায় ‘মো’শব্দটির অর্থ বাষ্প বা স্টিম। বাষ্পের সাহায্যে ভাপিয়ে  বানানো হয় বলে এর নাম মোমো।’মোমো’ শব্দটির অর্থ হল “মাংসে ভরা ভাপা ময়দার পুডিং বিশেষ”।স্টার্টার হিসেবে ডিমসাম বা এক কামড়ে খেয়ে ফেলার জন্যই এই খাবারটি প্রসিদ্ধ।

তিব্বতে চামড়ি গাইয়ের সহজলভ্যতা থাকায়, মোমোর ভিতরে পুর হিসেবে চামড়ি গাইয়ের মাংস ব্যবহৃত হত। এরপর নেপালের কাঠমান্ডুতে নেওয়ার সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীরা মোমো তৈরির পদ্ধতি শিখে নেপালে মোমোর প্রচলন করেন। নেপালে এসে, মোমোর পুরে আসে বদল। চামড়ি গাইয়ের পরিবর্তে পুরে ব্যবহৃত হত মহিষের মাংস। মাংসের ব্যবহার থাকায় নেপালের ব্রাহ্ম ও ছেত্রী সম্প্রদায়ের কাছে মোমো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল।পরবর্তী সময়ে নেওয়ার সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীরা মোমো তৈরির কৌশলে রদবদল করে মোমোকে প্রাত্যহিক খাদ্যতালিকায় স্থান দেয়।পরবর্তীতে নব্বই দশকের মধ্যবর্তী সময়ে জন আন্দোলনের পরে নেপালের বেশিরভাগ মানুষের কাছে মোমো প্রধান খাবার হয়ে ওঠে।২০০০সালের দিকে নেপালের কাঠমান্ডু থেকে কলকাতা তথা ভারত হয়ে মোমো সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। মোমো আসলে বাঙালির অতি প্রিয় পিঠা-পুলি সদৃশ এক ধরনের খাবার যাকে ইংরেজিতে ডাম্পলিং বলে। মোমো বানাতে যে ধরনের বাসন ব্যবহৃত হয়, তাকে বলে মাকটু।

মোমো সাধারণত দুই প্রকারের হয়, ভাঁপা এবং ভাজা। সাধারণত স্যুপ ও সস সহযোগে মোমো পরিবেশন করা হয়ে থাকে, তবে কিছু জায়গায় টমেটোর টক ঝাল চাটনিও পরিবেশন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের মোমো পাওয়া যায়, যেমন- ভেজ মোমো, চিকেন মোমো, পনির মোমো, স্যুপ মোমো, চকোলেট মোমো, সুইট অ্যান্ড সাওয়ার মোমো, তন্দুরি মোমো, চিলি  মোমো ইত্যাদি।

বর্তমানে মোমোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের ব্র্যান্ডেড ফ্র্যাঞ্চাইজ রয়েছে, যেমন- ওয়াও মোমো, মোমো কিংডম, নৈনিতাল মোমো,মোমো নেশন ক্যাফে, ডাম্পলিং মোমোস, দার্জিলিং মোমো ইত্যাদি। শুধু ভারতে নয়, বিদেশেও মোমোর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তবে, ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় মোমোর নামও ভিন্ন ভিন্ন। যেমন- চীনে বাওজি,পিনইন; মঙ্গোলিয়ায় বাজ, কোরিয়ায় মান্ডু,জাপানে গিয়োজার,তিব্বতে মগমগ,আসামে মম,নেপালের কিছু অঞ্চলে মমচা ইত্যাদি।

ভারতে ১৯৯৪সালে, দিল্লির লাজপত নগরে দলমা সেরিং প্রথম মোমোর দোকান চালু করেন। তিনি ভারতের প্রথম মোমো বিক্রেতা। তাঁর দোকানের নাম ‘দলমা আন্টি মোমোস’।

%d bloggers like this: