কিশলয় মুখোপাধ্যায়: ১৬ নভেম্বর জাতীয় প্রেস দিবস। ভারতবর্ষের সাংবাদিকতার উন্নতির জন্য ১৯৫২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রথম ‘প্রেস কমিশন’ গঠন করা হয়। ১৯৫৪ সালে এই কমিশন রিপোর্ট জমা দেয়। এই রিপোর্টে প্রেস কাউন্সিল গঠনের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া অন্যান্য সুপারিশও ছিল যেমন আর এন আই গঠন। এই কমিশনের সুপারিশে ১৯৬৬ সালে জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া। ১৬ নভেম্বর থেকে এই প্রতিষ্ঠান সার্বিক ভাবে কাজ শুরু করে। তাই প্রতিবছর এই দিনটিতে ‘জাতীয় প্রেস দিবস’ পালন করা হয়। ২০২২ সালের থিম ‘দা মিডিয়াস রোল ইন ন্যাশন বিল্ডিং’ অর্থাৎ দেশের উন্নতিকল্পে প্রেসের ভূমিকা। দেশকে গড়তে মিডিয়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য। দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছরের অম্রুত উৎসবে বলা যায় দেশকে স্বাধীন করতে সংবাদপত্রের অবদান ছিল অনেকখানি।
প্রেস বা মিডিয়া বা সাংবাদিকতার সঙ্গে স্বাধীনতা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। মিডিয়া গণতন্ত্রের সদা জাগ্রত প্রহরী। গণতন্ত্রের দুর্বলতা, সিস্টেমের দুর্বলতার দিকে আলোকপাত করে প্রেস। এতে গণতন্ত্রেরই ভালো হয়, তাই প্রেসকে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলে। প্রেস কাউন্সিল শ্রেষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য পুরস্কার দেয় তার মধ্যে প্রধান পুরস্কারটির নাম রাজা রামমোহন রায় পুরস্কার। বহুভাষাবিদ রাজা রামমোহন রায়কে ভারতীয় সাংবাদিকতার জনক বলা হয়। আজ থেকে ২০০ বছর আগে ১৮২২ সালে প্রকাশ করেন ফারসি ভাষায় সংবাদপত্র ‘মিরাতুল আখবার’। তিনিও প্রেসের স্বাধীনতা নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন। ১৮২৩ সালে নতুন সংবাদপত্র আইনের প্রতিবাদ স্বরূপ এই সংবাদপত্রটি বন্ধ করে দেন।১৮২৩ সালের ৮ এপ্রিল এই প্রতিবাদের বিষযটির ফারসি ভাষায় তাঁর লেখা সম্পাদকীয়টির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় ক্যালকাটা জার্নাল প্রত্রিকায়।
১৯৯৭ সাল থেকে প্রেস কাউন্সিল বিভিন্ন সেমিনার তথা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। এবারের অনুষ্ঠানটি হয়েছে নতুন দিল্লীর লোধী রোডের স্কোপ কনভেনশন সেন্টারে। মূল অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য পুরস্কার প্রদান, সমকালীন সাংবাদিকতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচোনা তথা স্মারক পুস্তিকা প্রকাশ ইত্যাদির মাধ্যমে দিনটি উদযাপিত করা হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারপার্সন সুপ্রিম কোর্টের অবসর প্রাপ্ত বিচারপতি হন। বর্তমানে রয়েছেন রঞ্জনা প্রকাশ দেশাই। এছাড়া ২৮ জন সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে ২০ জন মিডিয়া থেকে নির্বাচিত, ৫ জন সংসদ থেকে নির্বাচিত আর ১জন করে সংস্কৃতি, আইন ও সাহিত্য থেকে নির্বাচন করা হয়েছে। প্রেস কাউন্সিলের রাজা রামমোহন রায় পুরস্কার ছাড়াও রয়েছে শ্রেষ্ঠ গ্রামীণ সাংবাদিকতা, উন্নয়ন সাংবাদিকতা, চিত্র সাংবাদিতা, ক্রীড়া সাংবাদিকতা, ‘জেন্ডার’ সম্পর্কিত সা়ংবাদিকতা ও অর্থনৈতিক সাংবাদিকতা।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আজ সারা বিশ্বে প্রশ্নের মুখে। এর পক্ষে ও বিপক্ষে নানা মত রয়েছে। আশা রাখা যায় এবারের জাতীয় প্রেস দিবসের থিম দেশ গঠনে প্রেসের ভূমিকায় মিডিয়া যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।