ভারতের বডিবিল্ডিং এর ইতিহাসে এই বাংলার ভূমিপুত্র মনতোষ রায় আজকের দিনে লন্ডনে লাভ করেছিলেন বিশ্বশ্রী খেতাব। বিশ্বশ্রী মনতোষ রায়কে নিয়ে লিখলেন সাংবাদিক কিশলয় মুখোপাধ্যায়
আজকের দিনে অর্থাত্ ১৯৫১ সালের ১ সেপ্টেম্বর, লন্ডনের স্কালা থিয়েটারে বিশ্বশ্রী খেতাব পেয়েছিলেন প্রখ্যাত বডিবিল্ডার মনতোষ রায়। তিনি তৃতীয় বিভাগে প্রথম হয়েছিলেন। উচ্চতা অনুযায়ী তিনটি বিভাগ ছিল। প্রথমটি ৫’৯”এর বেশী, দ্বিতীয়টি ৫’৯” থেকে ৫’৬” পর্যন্ত, তৃতীয় বিভাগটি ৫’৬”এর নিচে উচ্চতার। প্রতিটি বিভাগের প্রথমকে বিশ্বশ্রী খেতাব দেওয়া হয় এবং একটি করে ব্রোঞ্জের গ্রিমেক মুর্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। এরপর তিনটি বিভাগ মিলিয়ে চ্যাম্পিয়ান অফ চ্যাম্পিয়ান হয়েছিলেন রেজ পার্ক। ফাইনালে ১৮ জন প্রতিযোগীর মধ্যে ৪০০ পয়েন্টের মধ্যে ৩৮৪ পয়েন্ট পেয়ে প্রথম হয়েছিলেন মনতোষ রায়। তারপর পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় জুয়ান ফেরেরো ৩৮৩৩/৪, তৃতীয় রেজ পার্ক ৩৮১১/২, চতুর্থ মনোহর আইচ ৩৭৮১/২, পঞ্চম মারিও মেরিলো ৩৭৬, ষষ্ঠ রবর্ট ডুরানটন ৩৬৬।
১৯৮৭ সালে ইলাস্ট্রেটর উইকলি পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাত্কারে মনতোষ রায় বলেছিলেন, “সেদিন আমার গায়ের রং আর দেশ দেখে বঞ্চিত করা হয়েছিল।” এই বিতর্কিত ফলাফল প্রথম আলোকপাত করেন বিশিষ্ট বডিবিল্ডার ও ব্রিটিশ বডিবিল্ডিং এর জনক অস্কার ফ্রেডরিক হেইডেনস্ট্যাম। তিনি হেলথ অ্যান্ড স্ট্রেংগথ পত্রিকায় লিখেছিলেন, “মনতোষ রায়ের পেশীর গঠন সুন্দর ও নিঁখুত অংগসৌষ্ঠব। তাঁর পেশী প্রদর্শন ছিল শিল্পতুল্য(Art)l পরে আমার নজরে আসে যে মিঃ রায় সিলেক্ট হয়েছিলেন মিঃ ইউনিভার্স রূপে। কিন্তু সেই সময় বিচারকমন্ডলী ‘ফিজিক’ বা দেহসৌষ্ঠবের তুলনায় পারফরমেন্সকে বেশি জোর দিয়েছিলেন। একথা বিষ্ণুচরণ ঘোষ বা অন্য লেখক সাংবাদিকরাও লিখেছিলেন যে তিন ভাগে পরীক্ষা নেওয়া হলেও এর মধ্যে ব্যাক্তিত্বকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল এবং নিয়মে পরিস্কার উল্লেখ ছিল।
হাইডেনস্ট্যাম আরো লেখেন যে “সামগ্রিক ভাবে এই প্রতিযোগিতা অ্যথলেটিক এবিলিটি বা ক্রীড়া নৈপুন্যর উপর ভিত্তি করে হয়েনি। তবে বিচারকমন্ডলী প্রথমে মিঃ রায়কেই খেতাব দিতে চেয়েছিলেন।” তবে ব্যাক্তিত্বকে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছিল বলে ৬ ফুটের ওপর রেজ পার্ক ছিল স্বাভাবিক চয়েস। সবদিকের যুক্তি ঠিক ধরেও এ কথা অনস্বীকার্য সেদিনের জন্য আমরা বাঙালিরা গর্বিত হই যে বডিবিল্ডিং এর বিশ্বমঞ্চে এক ভারতীয় তথা বাঙালি সবথেকে বেশি পয়েন্ট পেয়েছিলেন।