সারা বিশ্ব থরহরি কম্পমান করোনা ভাইরাসের সংক্রমনে। আমাদের দেশও আক্রান্ত এই ভাইরাসের করাল গ্রাসে। এরই মধ্যে সরকারের নির্দেশে চালু লক ডাউন সারা দেশে। আমাদের মধ্যে অধিকাংশই সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী এক কোথায় গৃহবন্দী হয়ে মারণ ভাইরাস করোনাকে রুখতে বদ্ধ পরিকর। তার মধ্যে সাধারণ জনজীবন যেন কোন ভাবেই না বিঘ্নিত না হয় তার জন্য সরকারও সদা সচেষ্ট। সরকার, পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে নানা সামাজিক সংগঠন এগিয়ে এসেছেন প্রান্তিক ও সাধারণ মানুষের পাশে। এই রকমই কিছু কর্মকাণ্ডের কথা এখানে।
সংবাদ প্রতিনিধি: আশীষ প্রামানিক, প্রবীর বোস, অনিমেষ মল্লিক, অমিত চক্রবর্তী
করোনা নিয়ে যখন সারা বিশ্ব তথা রাজ্যে লক ডাউন চলছে, তখন চরম সঙ্কটে পড়েছে রাজ্যের ব্লাড ব্যাঙ্ক গুলি। রাজ্যের প্রায় কোনো ব্লাড ব্যাঙ্ক গুলিতেই পর্যাপ্ত পরিমানে রক্ত নেই বললেই চলে, বিশেষ করে থ্যালাসেমিয়াতে আক্রান্ত রোগীদের ও রোগীর পরিবারের কাছে খুবই চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে এখন এই রক্ত সংকট। ঠিক সেই সময় হুগলী জেলার রিষড়ার একদল তরুণ সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও রক্ত দান করে এলেন শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে।
হুগলির বাঁশবেড়িয়া দমকল বাহিনীর পক্ষ থেকে হুগলির মগরা থানাকে সানিটাইজেশন করা হল সম্প্রতি। দমকলের আধিকারিক সূত্রে জানা গেছে, যেখানে বেশি মানুষের যাতায়াত বা মানুষের সমাগম হয়ে থাকে সেখানে এই ভাবেই সানিটাইজারের কাজ করা হচ্ছে। এছাড়াও করোনা ভাইরাস রুখতেই এই কার্যক্রম বলেও জানানো হয়।
শুধু লাঠির আঘাতে সাধারণ মানুষের মন জয় করা যায় না। একটু ভালো ভাবে বোঝালেই সাধারণ মানুষের মন জয় করা যায়। এমন নজির ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকলেন হুগলির পোলবা থানার সুগন্ধা এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে স্থানীয় মানুষ। লক ডাউনে নাকা চেকিংয়ে কোন লাঠি উঁচিয়ে বা লাঠির আঘাত না করে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করেন ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে থানার বড়বাবু থেকে পুলিশ কর্মীরা। এলাকার মানুষ পোলবা থানার ওসি ও তার কর্মীদের কাজের জন্য স্যালুট জানাচ্ছেন তাঁদের এই উদ্যোগের জন্য।
হুগলির হরিপাল থানার ওসি নজরুল ইসলাম হরিপাল থানার বেশকিছু জায়গায় গবীর মানুষের হাতে আহারের সামগ্রী প্রদান করেন। এদিন এই আহারের সামগ্রী পেয়ে হরিপাল থানা এলাকার গরীব দিন আনা পরিবারগুলির আশার আলো সঞ্চারিত হতে লক্ষ্য করা যায়।
করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে বন্ধ ফুটবল খেলা। সমস্যায় পড়েছে ফুটবলাররাও। আইভরি কোস্টের বেশ কিছু ফুটবলার মগরায় থেকে কলকাতার বিভিন্ন ক্লাবে ফুটবল খেলে। খেলা বন্ধ থাকায় আর্থিক সমস্যায় সেই ফুটবলাররাও। সোমবার মগরার সেই ফুটবলারদের পাশে দাঁড়ালো মগরা থানার পুলিশ। ফুটবলারদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।
ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে থাকা কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র ও করিমপুর অঞ্চলের যে সকল শ্রমিকেরা লক ডাউনের কারনে দেশের নানা প্রান্তে রয়ে গেছেন, তাদের কাতর আহবানে সাড়া দিয়ে কৃষ্ণনগর লোকসভার সাংসদ মহুয়া মৈত্র উদ্যোগী হয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে তাদের উপযুক্ত থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা করে দিলেন।
উত্তর কলকাতা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও ২নং ওয়ার্ড তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে এলিশা দত্ত ও বেশ কিছু তৃণমূল ছাত্র পরিষদ কর্মী উত্তর কলকাতার বিভিন্ন এলাকার ভবঘুরেদের মধ্যে মাস্ক বিরতরণ করেও স্যানিটাইজেশন করে এবং তাদের খাবার তুলে দিলেন।
বাঁকুড়া জেলা মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রীমৌ সেনগুপ্ত বাঁকুড়া শহরের বেশ কিছু দরিদ্র মানুষজনের হাতে সম্পুর্ন ব্যক্তিগত উদ্যোগে চাল ও আলু তুলে দিলেন এই বিপদের দিনে।
সম্পুর্ন মানবিক উদ্যোগে করোনা মোকাবিলায় লক ডাউন চলাকালীন অসহায় গরীব দুঃস্থ মানুষের হাতে খাদ্য সামগ্রী তুলে দিলেন করিমপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতি সভাপতি রাজু মল্লিক।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম পালের উদ্যোগে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে প্রথম পর্বের সংগ্রহে উঠলো আড়াই লক্ষ টাকা। গত বৃহস্পতিবার সহ উপাচার্য এক আবেদনে মহামারী করোনা মোকাবেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকমহল, শিক্ষাকর্মী বন্ধু, আধিকারিকদের কাছে থেকে উপার্জনের এক দিনের বেতন অথবা সাধ্যমত সাহায্য করার জন্য সম্মতি চান। এই আবেদনের ভিত্তিতে ইমেইল মারফত বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দপ্তরে সম্মতি পাঠিয়েও দেন অনেকেই। আর তাতেই প্রথম পর্বে ত্রান তহবিলে জমা হয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। উল্লেখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত স্তরের সদস্যরাই মহামারী করোনা মোকাবেলায় যে যার সাধ্য মতো এগিয়ে আসেন। শেষ খবর পাওয়া গেছে, প্রথম পর্বে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রান তহবিলে উঠেছে আড়াই লক্ষ টাকা, পরবর্তীতে এই ত্রাণ তহবিলে অর্থের পরিমাণ বাড়বে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।