সৌরভ মুখোপাধ্যায়: কলকাতা থেকে প্রায় কমবেশি সাতশো কিলোমিটার দূরে ছুটে চললাম ডুয়ার্সের বন্যপ্রকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে। আরে মশাই জঙ্গল সাফারি করলেন? কটা হাতি বাইসন দেখলেন? আরে দাঁড়ান দাঁড়ান মশাই ডুয়ার্সের প্রাণভোমরা তার অভয়ারণ্য মানছি কিন্তু শুধু তার প্রাণভোমরা দর্শন করে চলে আসব ? তাহলে তার হাত পা মাথার কি কোনো মূল্য নেই? ডুয়ার্স মানেই কি শুধু প্রাণিবিদ্যা আর ভূগোলের গোলমাল? কিন্তু সেখানে যে ওৎ পেতে বসে নীরবে ইতিহাসও তার হাত প্রসারিত করে রেখেছে। সেই হাতের হাতছানিতেই ডুয়ার্সের বিখ্যাত জলদাপাড়া অভয়ারণ্যকে বামপাশে ফেলে রেখে “অতীতের ইতিহাস”এর সাক্ষী থাকতে গাড়ি নিয়ে ছুটে চললাম কোচবিহারের রাজবাড়ী মদনমোহন মন্দিরের উদ্দেশ্যে।
কোচবিহার রাজবাড়ীর ইতিহাস, কোচবিহার রাজবাড়ি ইঁট দ্বারা নির্মিত একটি ক্ল্যাসিক্যাল ওয়েস্টার্ন শৈলীর দোতলা ভবন। মোট ৫২০০ বর্গফুট এলাকার উপর ভবনটি অবস্থিত। ১৮৮৭ সালে মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ তাঁর রাজত্বকালে লন্ডনের বাকিংহাম প্রাসাদের আদলে এই রাজবাড়িটি তৈরি করেছিলেন।
বৈরাগী দিঘির উত্তর পাড়ে মদনমোহন মন্দির মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিগ্রহটি কোচবিহার মহারাজাদের গৃহদেবতা। মন্দির প্রকোষ্ঠে রৌপ্যনির্মিত বৃহৎ মঞ্চ এবং মঞ্চের উপর রুপোর সিংহাসনে অলংকরণভূষিত অষ্টধাতুর মদনমোহন বিগ্রহ।
তবে খারাপ লাগলো একটি কথা জেনে ভিতরে কালিমায়ের বিগ্রহ থাকার জন্য রোজ চারটি করে পায়রা বলি হয়। যাকগে সেসব কথা।
ডুয়ার্স ট্যুর প্রথম পর্ব দ্বিতীয় ভাগ
“এ যে দৃশ্য দেখি অন্য যে অরণ্য/ এথা দিনেতে অন্ধকার এথা নিঝুম চারিধার” আরে না না গুপী বাঘা বা সত্যবাবু কেউই ফিরে আসেননি। ইতিহাসের গভীর হাতছানিকে অগ্রাহ্য না করে তাকে যথেষ্ট সম্মান দিয়ে আর পরবর্তী কালে আবার ফিরে আসার প্রচুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফিরে চললাম সেদিনের মতো রাত্রিবাস করতে। আগেরদিনের ঘোর কাটতে না কাটতেই পরদিন সক্কাল সক্কাল আবার বেরিয়ে পড়া। এবার কিন্তু বহুচর্চিত ডুয়ার্সের সেই বিখ্যাত জঙ্গলের রাজ্যে। গন্তব্য চিলাপাতার ঘন জঙ্গল আর বাঘমামাদের ডেরা দক্ষিণ খয়রাবাড়ি।
সবথেকে দুঃখের বিষয় হলো চিলাপাতা জঙ্গল দীর্ঘ সতের কিলোমিটার লম্বা (কমবেশি) তারমধ্যে মাত্র একজন গজরাজ আমাদের দেখা দিয়েছেন তাও আবার ওনার মাহুতকে সঙ্গে নিয়েই। এছাড়া ওই জঙ্গলের আর কোনো বাসিন্দার দেখা পাইনি। কিন্তু খয়রাবাড়ি মন ভরিয়ে দিলো, সবাই জানেন তবুও বলছি এই খয়রাবাড়ি একটি ব্যাঘ্র হাসপাতাল বলতে পারেন; যেখানে অসুস্থ বাঘেদের সেবা শুশ্রসা করে সুস্থ করে তোলা হয়। আপাতত ভিতরে একটি মাত্র রয়্যাল বেঙ্গল বাবাজি আছেন (দীর্ঘ নয় বৎসর যাবৎ) আর কিছু দুস্টুমি করা চিতাবাঘ যারা ওই চা বাগানের ভিতর মাঝে মাঝে চলে যান মানুষ বা গৃহপালিত পশুপাখি ধরতে।
কি করে যাবেন: হোটেল থেকে গাড়ি নিয়ে প্রথমে চিলাপাতা জঙ্গল ঘুরে নিন। দুপাশে দুটো চেকপোস্ট আছে। সময় সকাল 8 ঘটিক থেকে সন্ধ্যা ছয় ঘটিকা। শুধু গাড়ি করেই আপনাকে যেতে হবে। এরপর চলে যান খয়রাবাড়ি জঙ্গল। গাড়ি আপনাকে প্রবেশের মুখে ছেড়ে দেবে। সেখান থেকে টোটো গাড়ির সুবিধা আছে গাড়ি আপনাকে একদম বাঘেদের শুশ্রসাস্থল অবধি নিয়ে চলে যাবে। ভাড়া গাড়ি প্রতি একশ পঞ্চাশ টাকা(সময় অসময়ে পরিবর্তিত)।
(বি.দ্র.আমি বাংলা ভাষায় খুব পটু তাই পটু হতে যেটুকু পারলাম সাজিয়ে গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করছি মাত্র লেখাটা পড়ে নিজ গুনে মার্জনা করে দেবেন। সঠিক ইনফরমেশন না পাওয়ার জন্য ভিতরে ডিএসএলআর নিয়ে প্রবেশ করতে পারিনি তাই মোবাইলে যতটুকু ছবি তুলতে পেরেছি সেগুলোই দিলাম একমাত্র অস্ত্র সুসজ্জিত কক্ষের কোনো ছবি তোলার কোনো অনুমতি না থাকায় সে কক্ষটি বাদ গিয়েছে। আমার লেখায় কিছু তথ্য স্থানীয় সুত্রে জেনেছি কিছু তথ্য ইন্টারনেট প্রাপ্ত)