পথিক মিত্র, কলকাতাঃ সকলের সব উপহাসকে উপেক্ষা করে কলকাতা আরও একবার সাক্ষী হয়ে রইল জনসমুদ্রের। কোন এক অজানা, অমোঘ টানে প্রতি বছরেই লাখ লাখ সাধারণ মানুষ ছুটে আসেন ধর্মতলায় এই ২১ জুলাই। শুধুমাত্র মমতাময়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁদের অটুট আস্থা, বিশ্বাসই এই জনস্রোতের মূল কারণ তা সহজেই অনুমান করা যায়। তারই প্রতিফলন দেখা গেলো তৃণমূল কংগ্রেসের ২৬ তম শহীদ দিবসে। এদিন এই মঞ্চ থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন তাদের লড়াই বামপন্থী-বিজেপি, বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। যারা একত্রে বিগত লোকসভা নির্বাচনে অর্থের কাছে নতি স্বীকার করে বিজেপির কাছে নিজেদের বিকিয়ে দিয়েছে। কতমনি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন আমাদের এবার দাবি আমরা চাই ফেরত আসুক কালো টাকা। তিনি এই মঞ্চ থেকে প্রতিটি তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন ব্লকে-ব্লকে, পাড়ায়–পাড়ায়, গর্জে উঠতে কালো টাকা ফেরত দেবার জন্য, তার সঙ্গে নোটবন্দির কমিশনের টাকাও ফেরত দেবার দাবি রাখেন তিনি।
এবারের ২১ এর মঞ্চ থেকে মূল দাবি ছিল ইভিএম নয় নির্বাচনে ফেরত আসুক ব্যালট। সেই নিয়েও সরব হন তৃণমূল নেত্রী। তিনি দাবি করেন বিশ্বের সকল উন্নত দেশগুলিতে কোথাও মেশিনে ভোট নেওয়া হয় না তাহলে কেন আমাদের দেশে তা চলবে। তিনি সিপিএমকে ব্যঙ্গ করে বলেন ওর তো এখন নতুন বোতলে পুরোনো মদ। ভারতের গনতন্ত্র বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে পরে আজ বিপন্ন বলে তিনি বিজেপিকে এর জন্য দায়ী করেন। এই বাংলা কারও কাছে মাথা নোয়াবে না বলেও তিনি এদিন দাবি করেন। তিনি এদিন উজালা’র কাটমনি, পেট্রোল পাম্প পাইয়ে দেবার নামে কাটমনি এই সবকিছুর তদন্ত হোক বলে দাবি করেন একুশের মঞ্চ থেকে। এদিনের মঞ্চে সকল জল্পনার অবসান ঘটিয়ে উপস্থিত ছিলেন গায়ক নচিকেতা চক্রবর্তী।
শহীদ দিবসের এই মঞ্চে শহীদ পরিবারের সঙ্গে বাংলা চলচ্চিত্র জগত, সহ প্রবীণ গায়ক প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। এদিন এই সভা মঞ্চ থেকে তৃণমূল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবীণ নেতারা কেন্দ্র থেকে বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করার ডাক দেন। সুব্রত বক্সী বলেন, “আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে কায়দায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলনের ভীত ধরে ভারতবর্ষের মানুষ সচিত্র পরিচয়পত্র পেয়েছে, আমরা শত সহস্র সহকর্মী তার পায়ে পায়ে হেঁটে শরীরগত রক্ত, ঘাম, পরিশ্রম দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বকে সামনে রেখে ভারতবর্ষের সরকার তথা নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা ব্যালট ছিনিয়ে আনতে পারব। সভায় আগত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের এই ঐতিহাসিক সমাবেশের সূচনা করছি’’।
কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুর ও নগরন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বাংলার স্বাধীন হওয়ার সাথে সাথে ভারত পরাধীন হতে চলেছে। ভারত বিক্রী হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছে দিন আর আসবে না। কারন ভারতের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। আজকে বাংলার কৃষ্টি রক্ষা করতে আরও একবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে হাত রেখে বলি, আমরা তোমার সাথে আছি”।
সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘২০১৯এ আমাদের বক্তব্য, গণতন্ত্র ফিরিয়ে দাও, মেশিন নয় ব্যালট ফেরাও। অনেকে ভেবেছিল এই সভায় মানুষের ভাটা পড়বে, কিন্তু যতদূর পর্যন্ত দেখা যায় লক্ষ্য করুন, দেখবেন শুধু মানুষই মানুষ। ২০২১এর ভোটে বাংলা থেকে ২৫০টি আসন পেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃতীয় সরকার গড়ব। বাংলা থেকে সিপিআইএমকে উৎখাত করেছিলাম, এবার বিজেপিকেও করবো। তৈরী থাকুন এই লড়াইয়ের শেষ তৃণমূল দেখিয়ে ছাড়বে’।
রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা শুভেন্দু অধিকারী এদিন বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে যে সংস্কৃতিকে আনার চেষ্টা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে লড়তে হবে। তৃণমূল কর্মীরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে উন্নয়নের কর্ম যজ্ঞে আবার ফিরে যাক এটাই চাই। বিজেপির নেতারা বাংলার সংস্কৃতি জানেনা। জানলে ২০১৮ সালে কালির মূর্তি দেখিয়ে বলত না জয় মা দুর্গা, রবিঠাকুরের জন্মস্থান সম্পর্কে বলত না বীরভূমে রবিঠাকুরের জন্ম হয়েছে। বিদ্যাসাগরে মূর্তি মূর্তি ভাঙত না। যেখানে যেখানে ব্যালট এ ভোট হয়েছে, সেখানেই বিজেপি হেরেছে। তাই ইভিএম নয় ব্যালট চাই’।
(নিজস্ব চিত্র)