সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়ঃ জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর…এই মূল মন্ত্রকে পাথেয় করে একজন সমাজ দরদি মানুষ যাঁর পেশা অভিনয় ও যিনি একজন সাংবাদিকও যাঁর অপর পরিচয় তিনি একজন নিপাট পশুপ্রেমী। নিপাট বলার অর্থ আজকালকার লোক দেখানো পশুপ্রেম নয়, প্রকৃত পশুপ্রেম। কলকাতার উপকণ্ঠে মহেশতলা পৌরসভার অন্তর্গত জিঞ্জিরা বাজার এলাকার বান্দাল পাড়ায় বাস করেন এই মানুষটি। যাঁর পোশাকী নাম সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়।যাঁকে দেখে তাঁর এলাকার সকল পথ কুকুররা একযোগে আহ্লাদে আটখানা হয়ে পড়ে। সেই সঞ্জয় বাবু নিজে থেকে উদ্যোগী হয়ে ১৪ জুলাই সকালে তাঁর ওয়ার্ডের রাস্তার কুকুরদের নিজের খরচায় ভ্যাক্সিন দিয়ে তাঁর অঞ্চলের সকল রাস্তার কুকুরদের নিরাপদে বাঁচার ও সকল মানুষদের নিরাপদে চলাচল করার ব্যবস্থা করলেন তা এককথায় অনবদ্য। যে কাজটি সরকারীভাবে স্থানীয় পৌরসভার করার কথা, সেই কাজটি একজন সাধারণ মানুষ সম্পুর্ন নিজের চেষ্টায় করে আজ রাজ্যের মধ্যে নজির সৃষ্টি করলেন একথা বলাই যায়।
অবশ্য এই কাজটি করতে বা এই যে তাঁর পশুপ্রেম এর কারণে তিনি তাঁর এলাকার বেশ কিছু মানুষের কাছে চক্ষুশূল, এবং ১৪ জুলাই সকালে তিনি যখন সন্দীপন মুখোপাধ্যায়, প্রদীপ মণ্ডল, স্নেহাশীষ মণ্ডল, মীরা পাঠক ও তাঁর এলাকার অর্থাত্ মহেশতলা পৌরসভার ১২ নং ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি হরমোহন প্রামানিককে সঙ্গে নিয়ে এই কাজে ব্যস্ত তখন ওই সকল কতিপয় মানুষের বিক্ষোভের মুখে পরেও কিন্তু অবিচল ছিলেন এবং নিজের অদম্য জেদ ও অন্তরের পশুপ্রেম থেকে নির্বিঘ্নে পথ কুকুরদের ভ্যাক্সিন দেওয়া সম্পন্ন করলেন তা সত্যি প্রশংসার।
শুধুমাত্র রাস্তার কুকুর নয় ওই এলাকার অনেক মানুষজনদেরও এদিন সঞ্জয় বাবুর কাছে এসে তাঁদের বাড়ির পোষা কুকুরদের ভ্যাক্সিন দিয়ে নিয়ে যেতে লক্ষ করা যায়। স্থানীয় পুর প্রতিনিধি হরমোহন বাবু এরসঙ্গে বলেন তিনি তার এলাকার ক্লাবগুলির সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন এবং আগামীতে সঞ্জয় বাবুর দেখানো পথে চলতে ইচ্ছুক।
এখন যে প্রশ্নটি সহজেই উঠে আসে সেটি হল যে কাজটি সরকারী ভাবে স্থানীয় পৌরসভার করার কথা পৌরসভার সকল ওয়ার্ডের পৌর প্রতিনিধিদের মাধ্যমে, সেটি একজন পশুপ্রেমী অভিনেতা ও সাংবাদিক যদি নিজের মানসিক দৃঢ়তায় ও নিজের খরচায় করতে সক্ষম হন, তাহলে কি বা কোন অজ্ঞাত কারণে পৌরপ্রতিনিধি নিশ্চুপ ছিলেন এতদিন?
মহেশতলার মাননীয় পৌরপ্রধানের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আজ অনেকটাই উন্নয়নের সুফল লাভ করছে এই পৌরসভার অধিবাসীরা, তাহলে তারই পৌরসভা এই বিষয়টি নিয়ে কেন এতদিন নিঃশ্চুপ সেটাই এখন সকলের মনের কোণে উঁকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। আসলে আমাদের সমাজে কাউকে না কাউকে এগিয়ে এসে সমাজের জন্য কিছু কাজ করতেই হয় তারপরই টনক নড়ে সরকারী স্তরে সেই কাজটি করার।
আর এই পৌরসভার একজন সাধারণ বাসিন্দা হয়ে অভিনেতা-সাংবাদিক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় সেই কাজটিই করে দেখালেন একথা বলাই যায়। (নিজস্ব চিত্র)