নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতাঃ সারা দেশে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য এক আইনের দাবিতে, দেশে পুরুষ কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে কলকাতার বুকে বিগত কয়েকবছর কাজ করে চলেছে অভিযান ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট। এই সংগঠন মূলতঃ সারা দেশে মিথ্যা মামলা কারিণী ও অপরাধী মহিলাদের কঠিন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে, চাইল্ড কাস্টেডি আইনের সংস্কার এবং গরীব শিশু পুত্রদের শিক্ষার জন্য আর্থিক অনুদানের দাবি নিয়ে জনমত গঠন ও সারা দেশে লিঙ্গ নিরপেক্ষ আইনের দাবি নিয়ে নানান আন্দোলন কর্মসূচী পালন করে চলেছে সারা বছর। তাদের এই সকল দাবিকে আরও বেশি করে জনসমক্ষে ছড়িয়ে দিতে অভিযানের সদস্যবৃন্দ গত ২৬মে, ২০১৯ আয়োজন করেছিল এক মানব বন্ধনের বিধাননগরের ১৫ নং বাস স্ট্যান্ড এর সামনে। এদিন বিকাল ৪টায় এই উপলক্ষে সারা দ্পুরুষদের জন্য আলাদা কমিশন গঠনের দাবি, লিঙ্গ নিরপেক্ষ আইন ও সমাজের মহিলাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া আইনের বিলুপ্তির দাবি জানিয়ে অভিযানের সকল সদস্যরা অংশ নেয় এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে।
তাদের কর্মসূচী কেন সেই সম্পর্কে জানান অভিযানের সাধারণ সম্পাদিকা রীনা দাস, তিনি বলেন, ‘সরকার ও আইন এর নির্মাতা দের কাছে প্রশ্ন “ছেলের বৃদ্ধ মা একজন মহিলা নন? যে বোন টা তার নির্দোষ ভাই এর জন্য দিনের পর দিন আদালতের কড়া নাড়ছেন তিনি মহিলা নন? শুধু মাত্র কি বউরাই নারী? নারী সুরক্ষার নামে বউদের হাতে যে আইন গুলি তুলে দেওয়া হয়েছে তা আজ অস্ত্র সে বিষয়ে দেশের সবোর্চ্চ আদালতও জানেন। কেমন নারী ক্ষমতায়ন যার জন্য একজন মা, একজন বোন কে তার চোখের সামনে নিজের পরিবারের প্রিয় পুরুষ মানুষটিকে শেষ হতে দেখতে হয়?’ অভিযানের সহ সাধারণ সম্পাদিকা দীপা বড়াল বলেন, ‘আমাদের দেশে পশু, পাখি, গাছপালার জন্য মন্ত্রণালয় আছে, মহিলাদের জন্য মন্ত্রণালয় আছে, পাড়ায় পাড়ায় নারী অধিকার সংগঠন আছে, দেশে ৪৮ টার বেশী নারী কেন্দ্রিক আইন আছে, কিন্তু সমাজের অর্ধেক জনসংখ্যা পুরুষদের জন্য কোন আইন নেই। পুরুষরা কী মানুষ নন? তারা নির্যাতিত হতে পারেন না? নাকি হন না? সবাই সব জানেন। দেশের প্রধান বিচারপতিও ছাড় পাননা যেখানে, সেখানে ভাবুন তো সাধারণ পুরুষ মানুষগুলোর কী হাল? আমরা মহিলারা কি মিথ্যা কথা বলি না? তাহলে ২০১৯এ এসেও কেন একজন মহিলার শুধুমাত্র মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে একজন পুরুষের জীবন নষ্ট করে দেবে ভারতের আইন? কেন পুরুষ কমিশন হবে না!! কেন পুরুষ মানুষ বিচার পাবেন না বলতে পারেন?’
অভিযানের চেয়ারম্যান তথা সারা দেশে ‘মেনটু’ আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ গৌরব রায় বলেন, ‘যারা নারী অধিকার, নারীর সুবিচার নিয়ে কথা বলেন তারা কখনো ভেবে দেখেছেন নারীরা সুবিচার না পাওয়ার আসল কারন নারী কেন্দ্রীক আইনগুলির চরম অপব্যাবহার? দিল্লি মহিলা কমিশনের(২০১৩-১৪) রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে দেশে ৫৩.০২% ধর্ষণ মামলা মিথ্যা! সমাজের বাস্তব চিত্রটা অনুধাবন করুন দেখবেন ধর্ষণ, বধু নির্যাতন কিংবা শ্লীলতাহানি মামলার বাড়বাড়ন্তের অপর প্রান্তে রয়েছে আরও একটি ঘোর কালো দিক, যে দিকে টর্চ হাতে কেউ আলো ফেলেন না। ন্যাশানাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য বলছে, প্রতি বছর প্রায় ৯০,০০০ অর্থাৎ প্রতি ৯ মিনিটে একজন বিবাহিত পুরুষের আত্মহত্যা ঘটে চলেছে এই ভারতে। রিপোর্ট বলছে, এ দেশে গড়ে ৩৫% অ্যাসিড হামলার শিকার পুরুষ? শুধুমাত্র আমাদের পশ্চিমবঙ্গেই ৪৩.৭১% পুত্র সন্তান যৌন নির্যাতনের শিকার এবং নির্যাতকের অধিকাংশই নারী। কেউ কেউ ভ্রান্ত ধারনা পুষে রাখেন, যে পুরুষ অধিকার আন্দোলনের অর্থই বোধহয় ঘোরতর নারী বিরোধী! তাদের উদ্দেশ্যে জানাই, নারী অধিকার রক্ষার লড়াই যদি পুরুষ বিরোধী না হয়, পুরুষ অধিকার রক্ষার লড়াই’ই বা নারী বিরোধী হতে যাবে কেন? পুরুষের জন্য আইনের কথা বলা, তাদের সমস্যা গুলোর কথা বলা কী অপরাধ?’ গৌরব বাবু বলেন আমাদের সমাজে পুরুষরা কি পশুরও অধম? এদিন মানববন্ধন ছাড়াও এদিন সন্ধ্যায় মোমবাতি জ্বালিয়ে সারা বীর শহীদ পুরুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানান অভিযানের সদস্যবৃন্দরা। (নিজস্ব চিত্র)