সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ঃ ‘সীমান্তে আজ আমি প্রহরী, অনেক রক্তাক্ত পথ অতিক্রম করে আজ এখানে এসে থমকে দাঁড়িয়েছি……’ কিশোর কবির কলম থেকে গভীর যন্ত্রনার সঙ্গে উদগত এই লাইন গুলির সঙ্গে এই রাজ্যের এক অসমসাহসী জওয়ানের জীবনের মিল অনেকটাই। জীবন যুদ্ধে আজ তাঁকে বেঁচে থাকার তাগিদে রীতিমত নিজের সঙ্গে, নিজের শরীরের সঙ্গে, মানসিকতার সঙ্গে প্রতিপলে লড়াই করতে হচ্ছে। এই বছর ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মীরের পুলওয়ামাতে যেভাবে জঙ্গিরা ৪০ জন সেনা জওয়ানের জীবন কেড়ে নিয়েছিল ঠিক যে কায়দায়, আজ থেকে ৩৪ মাস আগে গত ২০১৬ সনের ২৫ জুন জম্মু-কাশ্মীরের অবন্তিপুর থানার পুলওয়ামাতেই ওই দিন জঙ্গিরা অতর্কিত হামলা চালিয়েছিলো ফায়ারিং রেঞ্জ থেকে শুটিং অনুশীলন করে ফেরত আসা একটি সেনা ভর্তি বাসের ওপর, এবং যে অকুতোভয় বঙ্গ-সন্তান নিজের জীবন বাজি রেখে জঙ্গি নিধনে রত ছিলেন এবং সেই সময়ে যাঁর শরীর ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলো জঙ্গিদের গুলিতে। ভারতমাতার সেই বীর সন্তানের নাম নিগমপ্রিয় চক্রবর্তী। বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার নবদ্বীপে। সেই ঘটনার পর সারা শরীরে মোট ১১ বার অপারেশন করতে হয়েছে তাঁকে সুস্থ করে তুলতে। ভাবতে অবাক হতে হয় এখনো অবধি তিনি তাঁর শরীরে মেরুদণ্ডে বয়ে বেড়াচ্ছেন ‘একে ৪৭’র একটি গুলি, এবং তাঁর সঙ্গে তিনি পেয়েছেন বিশাল রকমের একটি হার্নিয়া যা তাঁকে হাঁটতে-চলতে নানান অসুবিধায় ফেলে।
দেশের জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করে দেশকে রক্ষা করতে যাবার যে পুরস্কার তিনি পেয়েছেন তার জন্য আজ কতজন তাঁকে মনে রেখেছে! তিনি কি জানতেন সাক্ষাত্ মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে ফিরে আসা তাঁর জন্য কেউ মালা আর চন্দন নিয়ে অপেক্ষা করে থাকবে না বা আগামী প্রজন্ম তাঁকে মনেও রাখবে না কোনদিন। হয়তো বা সামান্য কিছু অতি উত্সাহী মানুষ তাঁদের নিজেদের প্রয়োজনে তাঁকে নিয়ে কিছুদিন নিজেরা সংবাদের শিরোনামে আসার জন্য কিছু লোকদেখানো কার্যকলাপ করবেন, কিছু বড় বড় বুলি কপচাবেন, কবির ভাষায় বলা যায়, “কত প্রশংসা, কত কবিতা…..দেশপ্রেমিক, ত্যাগীবীর…টেবিল ভেঙে ফেলবে থাপ্পড় মেরে বক্তার পর বক্তা।” অথচ সেই সামর্থ্যহীন বাতিওলার মত নিগমপ্রিয় আজও নিজের মনের কোণে দুঃসহ অন্ধকার নিয়ে গুমরে চলেছে। আজ যখন আবারও আমাদের দেশের বীর সেনাদলের উপর একই ভাবে জঙ্গি হানা ঘটলো তাতে একথা অনস্বীকার্য যারা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে আমাদের আমজনতার জীবন রক্ষায় সদা সচেষ্ট, তাঁদের নিজেদের জীবন কতটা সুরক্ষিত? নিজের জীবনকে বাজি রাখা নিগমপ্রিয় আজও শিউরে ওঠেন সেই ঘটনার কথা চিন্তা করে। এভাবে কতদিন আমাদের দেশের বীর সন্তানদের আমরা স্বাভাবিক জীবন-যাপন থেকে বঞ্চিত করে রাখবো? (নিজস্ব চিত্র)