চাতরার কুমোরপাড়া আজও অবহেলিত

শুরু হয়ে গেছে বাঙালীর সেরা উত্‍সব। সারা এলাকা সেজে উঠেছে প্যান্ডেলে, আলোকমালায়। বাতাসে কাশের দোলা, ঢাকের তালে তালে আপামর বাঙালীর মনও আজ খুশিতে ভরা। ধনী-দরিদ্র নিবির্শেষে আজ বাঁধন হারা আনন্দে মেতে উঠেছে। মা এসেছেন। শরতের এই অকাল বোধনে প্রকৃতিও আজ পরাজিত। এই অপর আনন্দের যারা অন্যতম কারিগর তাদের কথা আমরা কতজন ভাবি বা সেই ভাবে মনে রাখি? মাতৃপুজার বৃহত্‍ কর্মযজ্ঞে যারা প্রধান কারিগর সেই সকল প্রতিমা শিল্পীদের কথা আমরা কিছুমাত্র ভাবি কি?
সারা বাংলা জুড়ে রয়েছেন এই সকল প্রতিভাধর প্রতিমা শিল্পীরা। বাংলার প্রতিমা শিল্পের কথা উঠলেই প্রথমে যে নামটা আসে সেটি কলকাতার কুমারটুলি। কুমারটুলি ছাড়াও কৃষ্ণনগর, আর কৃষ্ণনগরের পরেই যে স্থানের নাম উঠে আসে সেটি হুগলি জেলার শ্রীরামপুরের অন্তর্গত চাতরা। চাতরার কুমোরপাড়া বিখ্যাত প্রতিমা শিল্পের জন্য। সারা বাংলার কোনে কোনে পৌঁছে যায় এখনকার শিল্পীদের হাতের কাজ। কিন্তু এনারা আজ অবধি সেই ভাবে তাদের যোগ্য সম্মান পেলেন কই? কিছুটা নীরব অভিমানে এই অঞ্চলের প্রতিমা শিল্পীরা নিমগ্ন তাদের সৃষ্টিতে। পুজো শুরুর ক’দিন আগে আমরা হাজির হয়েছিলাম হুগলি জেলার শ্রীরামপুরের অন্তর্গত চাতরা কুমোরপাড়ায়। সেই সময়ে এই এলাকার চারিদিকে চলছিল যুদ্ধকালীন তত্‍পরতায় শেষ মুহূর্তের তুলির টান। আমরা গুটি গুটি উপস্থিত হয়েছিলাম কয়েকজন প্রতিমা শিল্পীর স্টুডিওতে। এমনি এক প্রতিভাবান শিল্পী স্বপন কুমার পাল। তাঁর সঙ্গে কথায় কথায় উঠে এল নানা তথ্য। আজও কেন তাঁরা তাদের যোগ্য প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত ও তাদের নানা সুবিধা ও অসুবিধার কথা।

অপর এক শিল্পী যাঁর পারিবারিক পেশা মৃত্‍শিল্প নয়, যিনি স্ব-ইচ্ছায় প্রতিমা শিল্পী হিসাবে নিজের স্থান করে নিয়েছেন সেই রবীন্দ্র নাথ পালের গলায়ও পাওয়া গেল অভিমানের সুর।
আমাদের সঙ্গে এদিন চাতরার কুমোরপাড়ায় হাজির হয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বংশধর, বিদ্যাসাগর মিশনের অন্যতম কর্ণধার অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এই কুমোরপাড়ার মৃত্‍শিল্পীদের সামান্য মিষ্টিমুখ করালেন এবং সকলকে আহ্বান করলেন মানুষের পাশে মানুষের সঙ্গে পথ চলতে।

%d bloggers like this: