হার্ট অ্যাটাক আটকাতে দরকার ঘুম

আপনার কী ঠিকঠাক ঘুম হয়? ঘুমোনোর সময়ে আপনার নাকের গর্জনের ফলে কি সমস্যায় পরিবারের বাকিরা? অথবা ঘুমের ঘোরে ভুল বকেন বা মাঝে মাঝেই ঘুমের মধ্যে বিছানা ছেড়ে হাঁটতে বেরিয়ে পড়েন? আবার ঘুমোনোর সময়ে কি আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস কয়েক মিনিট বা কয়েক সেকেন্ড বন্ধ হয়ে যায়? যদি আপনাদের মধ্যে কারও এই ধরনের লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় তবে একদম দেরি না করে শরণাপন্ন হন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারবাবুর সাথে। আসলে ঘুম প্রত্যেক মানুষের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয়ও। আমাদের জানা নেই আমাদের ঠিক যতটা ঘুমনোর দরকার তা না হলে আমাদের জীবনে নেমে আসতে পারে নানা সমস্যা। দেখা দিতে পারে ১০০ রকম রোগ, যার মধ্যে মেজাজ খিটখিটে হতে পারে আবার সবথেকে যা ভয়ংকর তা হল হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা।

সারাদিন কাজ সেরে রাতে বাড়ি এসে কি আপনার অভ্যাস রয়েছে গরম পানীয় (চা) পানের বা এক গ্লাস কার্বনেটেড ড্রিংক পান করার, অথবা আপনি বলেন রাতে শোবার আগে কফি না পান করলে আপনার রাতে ঘুমই আসে না। এখনো সময় আছে ত্যাগ করুন এই বদভ্যাস। তাহলেই বাকি জীবনটা কাটাতে পারবেন নিশ্চিন্তে, দরকার পড়বে না ডাক্তারবাবুদের কাছে দৌড়নো। মাত্র ১০ টি অভ্যাস বদলে দিতে পারে আপনার জীবনযাত্রা। এগুলি হলো-

(ক) রাতে আপনার শোবার সময়টি নির্ধারিত করুন, চেষ্টা করুন ওই সময়ে শুতে ও ঘুমোতে। অনেকেরই অভ্যাস আছে ঘুমোনোর আগে বই পর বা বর্তমান সময়ে আধুনিক জীবনযাত্রার অন্যতম প্রধান মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে ঘুমোনোর, বন্ধ করে দিন এই সকল বাজে অভ্যাস।

(খ) রাতে ঘুমোনোর ৪ ঘণ্টা আগে অ্যালকোহল পান বন্ধ করতেই হবে।

(গ) চকলেট, চা, কফি, সোডা ইত্যাদি সেবন ঘুমোনোর ৬ ঘণ্টা আগে থেকে বন্ধ করুন।

(ঘ) অত্যধিক মশালাযুক্ত খাবার, ভারী খাবার অথবা মিষ্টি জাতীয় খাবার শোবার ৪ ঘণ্টা আগেই বন্ধ। হালকা খাবার খুবই উপযোগী রাতে সঠিক ঘুমোনোর জন্য।

(ঙ) প্রত্যেকদিন নিয়ম করে ব্যায়াম খুবই উপকারী, তবে তা কিন্তু কখনোই রাতে শোবার আগে নয়।

(চ) মনে রাখবেন আপনার বিছানাটা হয় যেন মনোরম।

(ছ) আপনার শোবার ঘরের তাপমাত্রা থাকতে হবে ঠিকঠাক, এর সাথে লক্ষ্য রাখুন শোবার ঘরের ভেন্টিলেশন যেন ঠিক থাকে।

(জ) বাইরের যাবতীয় শব্দ ও আলো থেকে নিজের শোবার ঘর কে সুরক্ষিত রাখুন।

(ঝ) আপনার শোবার বিছানা যেন কোনমতেই আপনার অফিস বা আড্ডার স্থান না হয়ে ওঠে। বিছানা মূলত ঘুমনো ও সংগমের জন্যই থাকা বাঞ্ছনীয়।

(ঞ) দুপুরে খাবার পর বেশ কয়েকঘণ্টা ভাতঘুমের অভ্যাস থাকলে তা পরিবর্তn করে সময় কমিয়ে খুব বেশি হলে ৪৫ মিনিট ঘুমোন।

এর সঙ্গে সঙ্গে আপনার সন্তানটিকে ও অভ্যাস করান বেশ কিছু ভাল অভ্যাস। যেমন রোজ একই সময়ে ঘুম, আপনার বাচ্চার ঠিক যতটা ঘুম দরকারী লক্ষ্য রাখুন সে যেন ততটাই ঘুমোচ্ছে, আপনার সন্তানের শোবার ঘরটিকে ঠান্ডা, অন্ধকার ও শান্ত করে তৈরি করুন। সন্তানকে একা ঘুমোতে অভ্যাস করান, রাতে শোবার আগে ভারী খাবার একদম বন্ধ, সন্তানের শোবার ঘোরে যেন কোনমতেই টিভি, মোবাইল, কম্পিউটার না থাকে, আপনার সন্তানকে রাতে শোবার আগে চকলেট, কফি ও চা পান করানো থেকে বিরত থাকুন।

১১তম বিশ্ব ঘুম দিবস উপলক্ষ্যে কলকাতা প্রেস ক্লাবে ২৮ এপ্রিল ২০১৮ আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে ঘুম আমাদের জীবনে কতটা প্রয়োজনীয়ও ও দরকারী এবং উপরিউক্ত বিষয়গুলি নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন ওয়ার্ল্ড স্লীপ ডে ২০১৮, ওয়ার্ল্ড স্লীপ সোসাইটীর পূর্ব ভারতের রিজিওন্যাল কো-অর্ডিনেটর ডাঃ সৌরভ দাস। এদিনের সম্মেলনে ডাঃ দাস ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অরেঞ্জ স্লীপ অপ্নেয়া ক্লিনিক এর বিশিষ্ট ই.এন.টি. সার্জেন ডাঃ উত্তম আগরওয়াল ও আর. এন. টেগর হাসপাতাল কলকাতার অন্যতম কনসালটেন্ট নিউরোলজিস্ট, এপিলেপ্টলজিস্ট অ্যান্ড স্লীপ মেডিসিন স্পেশালিস্ট ডাঃ হাসিব হাসান।

%d bloggers like this: