স্বরূপম চক্রবর্তী, সংবাদ প্রতিখন: জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী। জননী আর জন্মভূমি স্বৰ্গ হইতেও শ্রেষ্ঠ। এই আপ্তবাক্যটি আমদের সকলের জীবনের চলার পথের মূলমন্ত্র হওয়া উচিত। অথচ আজ আমাদের মাঝে শত শত জননী ক্রন্দনরতা, তাঁদের দুঃখের খবর, তাঁদের কষ্ট-দুর্দশার খবর কতজন সন্তান লাঘবের চেষ্টা করে। আজ আমাদের সামনে ভিড় করে আছে বৃদ্ধাশ্রম, সেই বৃদ্ধাশ্রমগুলিতে যে সকল জননীরা একান্তে গোপনে সদা চোখের জল ফেলে চলেছে তাঁদের সুযোগ্য পুত্র-সন্তানরা কী তাঁদের নিজেদের আগামীর কথা একবারও ভেবেছেন। যিনি দশ মাস দশ দিন নিজের গর্ভে যে সন্তানকে ললিত-পালিত করে পৃথিবীর বুকে নিয়ে আসেন যে জননী তাঁকে কেন তাঁর বৃদ্ধ অবস্থা থাকতে হবে বৃদ্ধাশ্রমের ছোট্ট ঘরটিতে। আধুনিক পুত্ৰগণ পিতামাতাকে উচ্চাসন প্রদান করিতে কুষ্ঠিত। আবার আমাদের সংসারে এমন সন্তানও বিরাজ করছেন যাঁদের কাছে পিতা-মাতা ভগবানের থেকেও বেশী। তাঁরা তাঁদের পিতা-মাতার অপূর্ণ ইচ্ছা তাঁদের পরলোকগমনের পরেও পূরণ করতে সদা সচেষ্ট।
এমনই এক সুযোগ্য সন্তান হুগলি জেলার চণ্ডীতলা অঞ্চলের মাননীয় সুবীর মুখার্জী, যিনি তাঁর গর্ভধারিণী জননীর শেষ ইচ্ছাকে মান্যতা দিয়ে সাধারণের সেবার জন্য দান করলেন একটি অত্যাধুনিক ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুলেন্স, যে কাজকে তিনি ব্যাখ্যা করলেন, তাঁর জীবনের সকল উত্থানের পিছনে তাঁর মায়ের অবদান অপরিসীম তাই তিনি তাঁর মায়ের রেখে যাওয়া কিছু টাকা ও তাঁর পরিবারের সকলের সহযোগিতায় চণ্ডীতলার মুমূর্ষু রোগীদের, মুমূর্ষু মায়েদের বাঁচাতেই এই ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুলেন্স জনসাধারণের সেবায় নিয়োজিত করলেন। সুবীরবাবু জনসমক্ষে ঘোষণা করেন তাঁদের এই ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুলেন্স গরীব মানুষের প্রায় নিখরচায় সেবা প্রদান করবে, এছাড়াও তিনি এতদঞ্চলের সাংবাদিক ও তাঁদের পরিবারের প্রয়োজনে এই ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারে বিশেষ ছাড়েরও ঘোষণা করেন। যা এককথায় অভূতপূর্ব।
সুবীর বাবু নিজে যদিও একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তবুও তাঁর শিশুকাল থেকে তাঁর জননীর দেওয়া শিক্ষাকে পাথেয় করেই তিনি সমাজসেবায় সর্বদা ব্রতী রাখেন নিজেকে। অন্তর যাঁর শিশুর মত কোমল, হৃদয় যাঁর কোমলতায় ভরা, ছন্দের জাদুকরীতে নিজেকে আবদ্ধ রাখতে ভালবাসেন যিনি, সেই সুবীর মুখার্জীর পক্ষেই তো সম্ভব এমন কিছু করা সমাজের আর্তের সেবায়। তাঁর মায়ের নামাঙ্কিত “ছায়াসাথী” নামক এই ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সমাজের সেবায় পথ চলার শুভ সূচনা করলেন সম্প্রতি এক অপরাহ্নে স্থানীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
“ছায়াসাথী”র পথ চলার শুভলগ্নে সুবীর মুখার্জী ওই দিনের চণ্ডীতলার স্থানীয় বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত ছোট্ট অথচ সুন্দর অনুষ্ঠানকে পরিণত করে তুলেছিলেন সর্ব ধর্মের মিলনক্ষেত্র হিসাবে। এই অনুষ্ঠানে যেমন হাজির ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রীরা, সঙ্গে উপস্থিত হয়েছিলেন সকল স্তরের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা, সঙ্গে ছিলেন এই রাজ্যের প্রথা ও মহান ঐক্যের এক অপরূপ মেলবন্ধন-হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খৃস্ট্রান সহ সকল ধর্মের ধর্মগুরুরা, এছাড়াও উজ্জল উপস্থিত ছিল মানুষদের সেবার সঙ্গে ও যাঁরা সরাসরি যুক্ত ও এই করোনা আবহে যাঁরা অকুতোভয় হয়ে মানবের সেবায় সদাই নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন সেই ডাক্তারবাবুদের।
এছাড়াও ওই অঞ্চলের ১০৩টি সংগঠনকে ও সাংবাদিকদের হাতে স্মারক তুলে সম্মাননা জানান হয় ওই সন্ধ্যায়। প্রসঙ্গত, সুবীর বাবু এদিন ঘোষণা করেন চণ্ডীতলা এলাকার অগ্নিকল্প, উত্তরণ ও প্রয়াস নামক তিনটি স্বেচ্ছাসেবি সংস্থা “ছায়াসাথী” দেখাশোনা করবে ও পরিচালনা করবেন। এদিন সুবীর বাবু বলেন, মাতৃঋণ কখনও শোধ করা যায় না, কিন্তু মাতৃঋণ শোধ করার একটা সদর্থক প্রচেষ্টা সকল সন্তানের থাকা উচিত।