সুগত মুখোপাধ্যায়: হেডের কাছেই মাথা হেঁট টিম ইন্ডিয়ার। তাই সুপার সানডেতে দেশবাসীকে বিশ্বজয় করে ট্রফি তুলে দিতে পারলেন না রোহিত শর্মা,বিরাট কোহলিরা। ফাইনালে এসে থমকে গেল রোহিতদের বিজয়রথ। কাজে লাগলো না কোটি কোটি দেশবাসীর প্রার্থনা,হোম-যঞ্জ। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামেই স্বপ্নভঙ্গ মেইন অ্যান্ড ব্লু – র। আফগানিস্তান ম্যাচে জ্বলে উঠেছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। আর মোদির বানানো মঞ্চে সকলকে স্তব্ধ করে দিয়ে ভারতের মাটি থেকে বিশ্বজয় করে দেশ ফিরছেন ট্রেভেস হেডরা। শতরান করে তিনি ট্রফিটা তুলে দিলেন কমিন্সের হাতে। তাই প্রথমে ব্যাট করেও সব আশা ধুলোয় মিশে গেল রোহিতদের। তাই ২০২৩ সালেও রেকর্ড বইতে ভারতের নামের পাশে রানার্স নামটাই লেখা থেকে গেল। তাই আর বদলা নেওয়া হল না রোহিতের দলের। প্রথম সাত ওভারে অজিদের ৪৭ রানের মধ্যে তিন উইকেট পড়ে গেলেও দেশবাসীর সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়ে ৬উইকেটে ম্যাচ পকেটে পুরে নিয়ে গেলেন হেড।
বিশ্বকাপের ফাইনাল ঘিরে গত কয়েকদিন ধরেই দেশজুড়ে সর্বত্র চলছিল আলোচনা। কিন্তু সুপার সানডেতে সব বিভাগেই ভারতকে টেক্কা দিয়ে গেল কমিন্সের দল। কি ফিল্ডিং, কি বোলিং বা কি ব্যাটিং – সব বিভাগেই অজিরা টেক্কা দিয়ে ষষ্টবার বিশ্বজয়ের মুকুট মাথায় পড়ল। তাই ২০১৫ সালের পর বিশ্বসেরা মুকুট উঠলো স্মিথদের মাথায়। তাই আর অপরাজেয় থাকা হল না রোহিতদের। তীরে এসে ঢুবে গেল কোহলিদের তরী। ২০২৩ বিশ্বকাপ আর হল না কোহলির বিশ্বকাপ। ১২০ বলে ট্রেভেস হেডের ১৩৭ রানের একটা ইনিংসই স্বপ্নভঙ্গ করে দিল রোহিতদের।
শুরুটাও করেছিলেন তিনি। শেষটাও করলেন তিনি। অবিশ্বাস্য একটা ক্যাচ নিয়ে রোহিতকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়েছিলেন তিনি। আর ব্যাট হাতে ১২০ বলে ১৫ টা চার ও চারটি ওভার বাউন্ডারি মেরে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের পর একদিনের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালেও প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচের সন্মান ছিনিয়ে নিলেন হেড। বিশ্বজয়ের স্বপ্নভঙ্গ হলেও ৭৬৫ রান করে টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটারের সন্মানটি পেলেন বিরাট কোহলি। কিন্তু আফসোস রয়ে গেল ট্রফি জিততে না পারার। কারণ চার বছর পর আর কোহলি একদিনের ম্যাচে দেশের হয়ে খেলবেন কিনা তা এখন কোটি টাকার প্রশ্ন।
টসে জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠায় অজিরা। ৩০ রানের মাথায় ওপেনার শুভমন গিলের (৪) উইকেট হারালেও পাওয়ার প্লে – র সুবিধা তুলে নিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। ৩১ বলে ঝোড়ো ৪৭ রান করে রোহিত যখন মারকাটারি মেজাজে তখন ম্যাক্সওয়েলের বলে কভারে পিছন ফিরে দৌড়ে যেভাবে অবিশ্বাস্য ক্যাচ নিয়ে রোহিতকে ফেরত পাঠালেন ড্রেসিংরুমে তাতে আভাস পাওয়া গেছিলো হয়তো আহমেদাবাদে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামেই মাথা উঁচু মাঠ ছাড়বেন হেড। শ্রেয়সো (৪) ফাইনালের মঞ্চে ব্যাট হাতে ব্যর্থ ।১০.২ ওভারে ৮১ রানের মধ্যে তিন উইকেট পড়ে গেলেও দলকে কিছুটা টানলেন কোহলি – লোকেশ রাউল জুটি। চতুর্থ উইকেটে দুজনে যোগ করলেন ৬৭ রান। কোহলি ৬৩ বলে ৫৪ রান করে ফিরলেন। রাউল করলেন ৬৬ রান। লোয়ার অর্ডারে আর কেউ বড় রান না পাওয়ায় ৫০ ওভারে ভারতের ইনিংস ২৪০ রানে শেষ হয়। মিচেল স্টার্ক ৫৫ রানে তিনটি এবং প্যাট কমিন্স ও জ্যোশ হ্যাসেলহুড দুটি করে উইকেট নিয়ে দলকে স্লো উইকেটে এগিয়ে দিয়েছিলেন। আর অস্ট্রেলিয়া ব্যাট করতে নেমে সপ্তম ওভারে ৪৭ রানে ডেভিড ওয়ার্নার (৭),মিচেল মার্শ (১৫) ও স্টিভেন স্মিথকে (৪) ফিরিয়ে দিয়ে আশার আলো জালিয়ে তুলেছিলেন বুমরাহ,সামিরা। সিরাজের বদলে বুমরাহের সাথে নতুন বল হাতে সামি প্রথম ওভারে জ্বলে উঠলেন তা দীর্ঘস্থায়ী হল না। মারনাস ল্যাবুসচেঞ্জনিকে নিয়ে ম্যাচ উইনিং খেলে দলকে ষষ্ঠবার বিশ্বসেরার ট্রফি এনে দিলেন হেড। চতুর্থ উইকেটে ১৯২ রানের একটা জুটি ভারতের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন ভেঙে গুড়িয়ে দিল। তাই প্রধানমন্ত্রি নরেন্দ্র মোদিকে কমিন্সের হাতে বিশ্বসেরার ট্রফিটি তুলে দিতে হল। আর চোখের জল মুছেই তাই মাঠ ছাড়তে হল সিরাজদের। আবারো অপেক্ষা শুরু চার বছরের। থেমে গেলে টানা দশটা ম্যাচ জেতার অশ্বমেধের রথের চাকা।