গতকাল আমরা পালন করেছি শিক্ষক দিবস। শিক্ষক দিবস উপলক্ষে বিশেষ প্রতিবেদনে সাংবাদিক কিশলয় মুখোপাধ্যায়
বোলিং ১
শীতের সন্ধ্যেতেও ঘামতে শুরু করেছে সুজন। রেডিওর খবর শুরু হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের ৩০ তাড়িখে কলকাতায় ওয়েষ্টইণ্ডিজের সঙ্গে তৃতীয় টেস্টে ভারতীয় দল ঘোষনায় সুজন রায় নামটি উচ্চারনের সাথে সাথে বাড়ির সবাই আনন্দে মেতে ওঠে। সেদিন রাতে স্বপ্ন দেখল সুজন। পরেরদিন ফাদারের সঙ্গে কলকাতায় দেখা করবে সুজন। তার আগেই দেখল ওদের গ্রামের বাড়িতে ফাদার ফ্রান্সিস গাড়ি থেকে নামছেন। গল্পটি হল শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘নটঅউট’। যে গল্পে গ্রামের সুজন রায় কলকাতায় পড়তে এসে ফাদার ফ্রান্সিসের কাছে ক্রিকেটের তালিম নিয়ে ভারতীয় দলে খেলে।
বোলিং ২
গঙ্গার পাড়ে দাঁড়িয়ে ক্ষিতিশ সিংহ। হঠাৎ কোনি কোনি চিৎকারে জলের দিকে তাকালেন, একটি মেয়েকে সাঁতরাতে দেখে ক্ষিতিশ সিংহের জহুরি চোখ বোঝে সাঁতারে সম্ভাবনা আছে। কোনির ক্ষিদ্দা, আমাদের ক্ষিদ্দা। সবসময় বলত কোনি ফাইট কোনি ফাইট। মতি নন্দীর লেখা বিখ্যাত গল্প। গল্পটি বা সিনেমাটি যতটা কোনি ঠিক ততটাই ক্ষিদ্দা। আর সৌমিত্র ক্ষিদ্দা বাঙালির হৃদয় আজীবন রয়ে গেছে।
বোলিাং ৩
অষ্ট্রেলিয়ার সুইমিং পুলে একটি ১৪ বছরের মেয়ে সাঁতার কাটতে দেখে হ্যারি গ্যালগার বুঝেছিলেন মেয়েটির প্রতিভা। কোনির মতো ডাকাবুকো মেয়েটি হলেন অষ্ট্রেলিয়ার অন্যতম সাঁতারু ডন ফ্রেজার। ১৯৫৬ সালে মেলবোর্ন, ১৯৬০ সালে রোম, ১৯৬৪ সালে টোকিও অলিম্পিকে ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে সোনা জিতেছিলেন। মোট ৮ টি পদক রয়েছে অলিম্পিকে। মতি নন্দী বলেছিলেন ডন ফ্রেজারকে ভেবে কোনি গল্পটি লিখেছিলেন। আর ডনকে আবিস্কার করেছিলেন হ্যারি গ্যালগার। হ্যারি হলেন অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের অন্যতম সফল কোচ।
বোলিং ৪
অস্ট্রেলিয়ার আরেক ডন, ডন ব্র্যাডম্যান। ডন বলা যায় যাকে বলে নিজে নিজে শিখেছিলেন। আজকের দিনে যাকে বলে সেল্ফ লার্নিং। তিনি একটি বই লিখেছিলেন ‘দা আর্ট অফ ক্রিকেট’। গোপাল বসু বলেছিলেন কোচিং এর শেষ কথা এই আর্ট অফ ক্রিকেট। বইতে একটি পাতায় লেখা আছে পে অ্যাটেনসন টু দা মাইনিউয়েস্ট অব ডিটেলস। গোপাল বসু বলেছিলেন এই উপদেশ টা যুগে যুগে সত্য। খেলাটা অসম্ভব ভালো বুঝতেন শুধু তাই নয় আম্পারিং নিয়ে অধ্যায়টি লেখার আগে আম্পারিং পাশ করেছিলেন। এমনকি বল সুইং কেনো করে তার ব্যাখ্যা একজন বিজ্ঞানের শিক্ষকের সাহায্য নেন।
বোলিং ৫
পেলে খালি পায় রাস্তায় ফুটবল খেলছিলেন। ব্রিতো দেখতে পেয়ে দাঁড়ালেন। দেখলেন পেলের অসাধারন দক্ষতা। বাউরো আতলেতিকো ক্লাবে নিয়ে এলেন ব্রিতো। পেলেকে সব পজিশনে খেলিয়ে তৈরি করলেন ভালদেমার দে ব্রিতো। ১৯৩৪ সালে বিশ্বকাপ খেলেছিলেন ব্রিতো। তিনি আতলেতিকোর কোচ ছিলেন। পেলেকে আবিস্কার করেছিলেন। বাকিটা ইতিহাস।
বোলিং ৬
চ্যাম্পিয়ান ‘মানসিকতা’ ছাপিয়ে যায় তাদের প্রতিভা ও টেকনিককেও। সে যে জগতেরই হোক না কেন। বলেছিলেন স্বনামধন্য ক্রিকেটার তথা সফল কোচ গোপাল বসু। ২০০৮ সালে যখন ভারত অনুর্ধ ১৯ বিশ্বকাপ জিতলো তখন ক্যাপ্টেন ছিলেন বিরাট কোহলি আর ম্যানেজার ছিলেন গোপাল বসু। কলকাতা ফিরে এসে বলেছিলেন বিরাট কোহলি ভবিষ্যতে সম্পদ হতে চলেছেন। ভবিষ্যতবাণী একদম ঠিক ছিল। দেবাং গান্ধী, রনদেব বসু, সৌরশিষ লাহিড়ী তাঁর কোচিং এ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি ছিলেন সফল কোচ। সবাইকে যেমন ব্র্যাডম্যানের লেখা আর্ট অফ ক্রিকেট পড়তে বলতে, আত্মস্থ করতে বলতেন সেরকম তিনিও একটি বই লিখেছিলেন ‘এস ক্রিকেট খেলি’। বাংলায় লেখা আজকাল প্রকাশনা থেকে ১৯৯০ সালে প্রকাশিত বইটি এখনও কাজের। এই বইতে শুরুতেই বলেছিলেন খেলাটা আনন্দে খেল, উপভোগ কর। ব্যটিং, বোলিং, ফিল্ডিং ক্রিকেটের সবটাই উপভোগের ব্যপার। যে যত ভালো খেলতে পারবে সে তত বেশি আনন্দ পাবে। আর বলেছিলেন যে নামেই ডাকুন, সাফল্যের জন্য জেদ, জ্বালা, খিদে, মনের জোর, সাহস চাই-ই।
এক ওভার শেষ। গল্প হোক বা বাস্তব প্রত্যেক অর্জুনের একটি দ্রোণাচার্য থাকে। আজ শিক্ষক দিবস। আরো অনেক শিক্ষকের কথা বলা হলোনা। তবে এই সব দ্রোণাচার্যরা হিরে খুঁজে বের করেন। আমাদের উপহার দেন। সবাইকে মোটিভেশন করেন আর রাস্তা দেখান।