বৈশ্বানর: মোট দুটি গল্প নিয়েই এই বইটির আত্মপ্রকাশ। প্রথমটি “গোলকপতির আলো এবং দ্বিতীয় গল্পটি ‘গোপাল’। প্রথম গল্পে গোলকপতির সন্ধানে বেরিয়ে অনাথ বন্ধুর যে নিরন্তর অনুসন্ধিৎসু মনের জটিল গোলক ধাঁধার সম্মোহনী আবর্তে হারিয়ে নিজের আপন সত্ত্বাকে অন্তর্মুখি সত্ত্বার সঙ্গে এক সূত্রে বাঁধতে চাওয়ার যে নিরলস প্রচেষ্টা, তা অনাথের ব্যাকুল হৃদয়কে মাঝে মাঝে আকাঙ্খিত দুর্লভ ভাবনার রাজ্যে টেনে নিয়ে গেছে, যা পরাম্মুখ হলেও এক কথায় বিদগ্ধ চেতনার জ্বালামুখ বলা যায়।
গোলক পতির আলো খুঁজতে এসে যে কটি চরিত্রের অবতারনা করা হয়েছে তা আলো আঁধারিতে ভেসে ওঠা ধূমকেতুর মত অনাথের মনের জানালায় ভেসে উঠে আবার তা মিলিয়ে গিয়েছে। বাস্তবের মাটিতে আছাড় খাওয়া অনাথ যখন স্বকীয় সত্ত্বায় ফিরে আসে তখন তার অন্তর্মুখী আত্মার যোগসূত্র বিচ্ছিন্ন হয়ে তাকে দৈনন্দিন চেতনায় বিবর্ণ করে দেয়। গল্পটি রূপকধর্মী হলেও পাঠক মনে ধরা পড়বেই। সেক্ষেত্রে গল্পের নামকরণের সার্থকতা সামঞ্জস্যপূর্ণ।
‘গোপাল’ গল্পটি গ্রামের এক নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মন পরিবারকে নিয়ে রচিত হলেও লেখক তার চরিত্র চিত্রায়নের মধ্যে দিয়ে এক অনাস্বাদিত সাহিত্যরসের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এ গল্পে রঘুনন্দন ও তার স্ত্রী কাদম্বিনী এবং তাঁদের দুই সন্তান দীপ ও রিনিকে নিয়েই তার অভাবের সংসারে সংগ্রামে রত থাকলেও সততা, ধার্মিকতা এবং নিষ্ঠাই রঘুনন্দনের জীবনকে কোনদিন আহত করতে পারেনি। বরং তাঁর ও তাঁর সহধর্মিনী কাদম্বরীর স্নেহ মায়া মমতা এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসাকে জয় করার যে স্পর্ধা লেখক দেখিয়েছেন তা এক কথায় অনবদ্য। একজন নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ হয়ে জাতিভেদকে চূর্ণ করে বীরু বাউড়ীর মত একজন অন্ত্যজ শ্রেণীর ছেলেকে সন্তান বাৎসল্যে নিজের পুত্র হিসেবে বুকে টেনে নেওয়ার যে দুঃসাহস রঘুনন্দন ও কাদম্বরী সেই ব্রাহ্মন সমাজে থেকে দেখিয়ে দিয়েছেন তাতে শুধুমাত্র চরিত্র চিত্রনেই নয় লেখকের দুঃসাহসিকতাকেও ধন্যবাদ।
“গোলক পতির আলো”
লেখক-প্রভাস মজুমদার
প্রকাশনাঃ কারুলিপি
মূল্য: ১৫০ টাকা