গল্পমালায় ছোট গল্প নিয়ে আজ রয়েছেন রামকৃষ্ণপুর, বারাসত থেকে শিপ্রা ব্যানার্জী
নন্দিনী
ময়ুরের পেখম মেলা আর আকাশে মেঘের খেলা, ফুল ফুটলে অলির টানে ভ্রমরের গুণ গুণ গানের মেলা ঝড় বয়ে গেলে তারঁ শাখাপ্রশাখা পরস্পর কে জড়িয়ে ধরে নদী তাঁর জল কে দুকূল ছাপিয়ে দেয় ঠিক তেমনই নন্দিনী আর তাপস। তাঁদের বেড়ে ওঠা সেই শৈশব থেকে আজ ভরা শাখেঁ পুস্পে সজ্জিত আগুনের ঘনঘটা। কৃষ্ণচুড়া ও রাধাচূড়া একে অপরকে আলিঙ্গন করে বলছে কত জনমের পর মিলন স্রোতে আমরা ভেসেছি দোঁহে। এমনই তাঁদের সখ্যতা, ছোট্ট বেলায় যে চারাগাছ রোপন হয়েছিল কালের নিয়মে তা রাঙা কৃষ্ণচুড়ার ন্যায় প্রেমের পরাগ রেনু মাখে। দুটি হৃদয় হৃদয়ের উত্তাপ নিয়ে, বহমান দুই নদীর মতো বয়ে যায় কুলু কুলু তাঁর ধ্বনী কোথাও যেন থামবে না, ওরা দিগ্বিজয় করে আসবে। চঞ্চল মন, উদগ্র কামনা ও উদ্ধত শির নবযৌবনর প্রারম্ভে ওদের পায় কে!
থামতে ওরা জানে না। বৃন্দাবনের প্রেমের খেলা ওঁরা খুব সুন্দর খেলে চলে, যেন কানু শত শত জনম পর আবারও তাঁর রাই-বিনোদিনীর সাথে প্রেম লীলায় মত্ত। প্রকৃতিও যেন হেসে খেলে মোহময়ী আবহে জগৎবাসীকে সন্মোহন করে রাখে। কিন্তু বিধি বাম হবেই, যুগে যুগে কংসের কারাগার থাকবে।
আর তাতে বাধ্য হয়ে মা দেবকীকে অসহায় হয়ে বন্দী জীবন কাটাতে হবে। কারাগার আলো করে দেবকী নন্দন জন্ম নেবে। সমাজের মানবতাকামী ডক্টর সাহেব শিশুকে এ যুগের কোনো সন্তান হীনা দম্পতিকে সন্তান দিয়ে সন্তানহীনার কলঙ্ক মোচন করবে।
তবে এখানে তাপস মাতা দেবকীর সন্তান নন, তিনি মাতা কুন্তীর সন্তান তাই তাঁকে একপ্রকার বন্দী করে তাঁর সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মৃত প্রসব করেছে বলে তাঁর বাচ্চাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিলো। পরে তাঁকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে বিদেশে পাঠানোর নামে দেশ ছাড়া করে দেওয়া হয়েছিল। এই সমস্ত প্রক্রিয়াটি সুসম্পন্ন করেছিলেন ও দায়ভার গ্রহণ করেছিলেন বিনিময়ে শিশুটি কিনে এনেছিলেন তাপসের ঠাকুরদা। যদি ও শেষ রক্ষা হলো না। দুই যুগ পরে সত্য সামনে। তিনি আর দেখে যেতে পারেন নি।
যে ছেলে আর বৌমার জন্য তিনি এসব করে ছিলেন, তাঁদের গোকুলের অধ্যায় কত হৃদয় বিদারক হয়েছিলো। বিভীষণ সব যুগেই ছিলো, এ যুগেও আছে, ফলে সত্যের পক্ষ নিলো। সে তাপসের মামা, মানে যশোদা মায়ের দাদা। মা এর খোঁজে চলেছে তাপস। এই টানকে উপেক্ষা করার মতো আবেগ গিলে ফেলা তো আজ অবধি কারোর হয় নি। ঈশ্বরও তা পারেন নি। তাপসকে রোখা গেলো না, কিন্তু নন্দিনীর কি হবে? সে তো উভয় সংকটে ভুগতে লাগলো। নন্দিনীর কাছে গেলো তাপস, চার চোখের জলে আবারও নদী হয়ে বয়ে গেলো সেই উজ্জ্বয়নী নগরে। তাপস গেলো মায়ের খোঁজে, নন্দিনী আজও খোঁজে নদী পারে ঐ সন্ধ্যা বেলা বাঁশী বাজে ঐ কদমতলে।