ধবলগিরি, ওডিশার পিস প্যাগোডা

বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে ওডিশার পিস প্যাগোডা নিয়ে আলোকপাত করলেন সাংবাদিক কিশলয় মুখোপাধ্যায়

খ্রীষ্টপূর্ব ২৬১সালে মৌর্য সম্রাট অশোক কলিঙ্গ আক্রমণ করলেন তখন কলিঙ্গ রাজা ছিলেন অনন্ত পদ্মনাভন। সে এক রক্তক্ষয়ী ভীষণ যুদ্ধ। জনশ্রুতি যে ধৌলি সবুজ পাহাড় আর নীল দয়া নদী লাল রক্তে লাল রঙে পরিণত হয়েছিল। সম্রাট যুদ্ধেতো জিতলেন কিন্তু এত মৃত্যু তাঁকে ব্যাথিত করে। তিনি বৌদ্ধ সন্ন্যসী উপগুপ্তের কাছে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করলেন। রাজা অশোক ‘চণ্ড’ অশোক থেকে ‘ধর্ম’ অশোকে পরিণত হলেন। আর বলা যায ওডিশার এই ধৌলি থেকেই বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার হতে শুরু করল। এই ইতিহাস কম বেশী সবারই জানা। এই ঘটনা বা ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ধবলগিরি বা ধৌলি পাহাড়ের ওপর শান্তি স্তুপ বা পিস প্যাগোডা। আর এখানেই যুদ্ধটা হয়েছিল বলা যায়।

আমরা কজন এই পিস প্যাগোডা দেখতে এবং জানতে গত ২৯ এপ্রিল ২০২৩ পুরী থেকে গাড়িতে পাড়ি দিয়েছিলাম । রাজ্যের রাজধানী ভূবনেশ্বর থেকে ৭-৮ কিলোমিটার দূরে পুরী জেলায় অবস্থিত এই প্যাগোডাটি। সাদা রঙের এই প্যাগোডায় ঢুকতেই দুদিকে সিংহের ভাস্কর্য রয়েছে। এই শান্তি স্তুপটি ১৯৭২ সালে ৮ নভেম্বর উদ্বোধন হয়। তার আগে এটি তৈরি করতে প্রায় ২ বছর লাগে। তৎকালীন বিহারের গভর্নর নিত্যানন্দ কানুনগোর তত্ত্বাবধানে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় আর সর্বোত ভাবে সাহায্য করেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী নিসিদাতসু ফুজি ও তাঁর সহ সন্ন্যাসীগণ। চারটি বড় বুদ্ধদেবের মুর্তি রয়েছে। এর মধ্যে একটি শায়িত বুদ্ধদেবের মুর্তি রয়েছে। প্যাগোডার মধ্যে খোদাই করা ভাস্কর্য ও মুর্তি রয়েছে। এই ভাস্কর্য গুলি দেখলে গৌতম বুদ্ধের জীবনী, বৌদ্ধ ধর্ম, শান্তি, যুদ্ধ জানা যায়। রয়েছে সম্রাট অশোকোর মুর্তিও রয়েছে। এছাড়া ধৌলি পাহাড়ে রয়েছে পাহাড় কেটে তৈরি করা হাতির মুর্তি। এটি এই রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন বৌদ্ধ ভাস্কর্য। ধৌলি শান্তি স্তুপে সন্ধ্যায় লেজারের আলোয়ে আলোকিত থাকে আর লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো হয়। তবে আমরা দিনের বেলায় রওনা দিয়েছিলাম নন্দনকানন উদ্দেশে। ওডিশায় ধৌলির অর্থ শুভ্র আর এই শান্ত প্যাগোডাটির রঙ সাদা। এই শুভ্র ধৌলি শান্তি স্তুপ বা পিস প্যাগোটাটি ‘শান্তি’র প্রতিক রূপে সদা বিরাজমান।

%d bloggers like this: