দ্বিতীয় বার পিতৃহারা হলাম

Untitled-1

[ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রয়ানে সংবাদ প্রতিখনের সম্পাদক স্বরূপম চক্রবর্তীর সঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অন্যতম ছায়াসঙ্গী হুগলীর বাসিন্দা জাতীয় কংগ্রেস নেতা প্রীতম ঘোষ। ]

pranabকংগ্রেস রাজনীতিতে ১৯৭৯-৮০ সাল থেকে ওনার সঙ্গে একসঙ্গে পথ চলা শুরু, গত জুলাই এর ২০ তারিখে শেষ কথা হয় ফোনে, মাসে একবার করে এই লক ডাউনের মধ্যে কথা হত, মাঝে ওনার হাত ভাঙার পর আমার সঙ্গে এই জুলাইতেই শেষ কথা হয়। এককথায় বলতে গেলে বলা যায় প্রণবদা ছিলেন জ্ঞানের পিরামিড, তিনি ছিলেন প্রকৃত ভারতীয়। যাঁরা ওনাকে কাছ থেকে দেখেছেন তাঁরা জানেন উনি এই দেশটাকে কতটা নিজের করে ভালবাসতেন, ওইরকম একটা মানুষ কত সাধারণ জীবনযাপন করতেন তা এখনও অনেকের কাছেই অজানা রয়ে গেল। যে সর্বোচ্চ আসনে উনি পৌঁছেছিলেন সেখানে থেকেও যে সাধারণ জীবন যাপনে তিনি অভ্যস্ত ছিলেন তা বিরল। প্রণবদা একটা কথা বার বার বলতেন যেটা ওনার স্ত্রী অর্থাত্‍ আমাদের বৌদি আমাদের বহুবার বলেছিলেন, ‘ক্ষমতা হচ্ছে মোষের শিং এর ওপর পোস্তর দানা, এই আছে এই নেই’। ক্ষমতা যে তাঁর চিরকাল থাকবে তা তিনি কোনোদিনই আশা করেন নি, কিন্তু সময়-কাল-ভাগ্য তাঁকে বরদান করেছে সবসময়ই। একটা কথা বলি আমার রাজনৈতিক অভিভাবক এই মানুষটি অসম্ভব তেলেভাজা মুড়ি খেতে ভালবাসতেন, বহু যায়গায়  মিটিং এর পর আমি তেলেভাজা কিনে রেখে দিতাম ওনার জন্য, বিশেষ করে আলুবড়া, বেগুনি আর মুড়ি ছিল ওনার খুব প্রিয়। ওনার উত্থান-পতনে ওনার পাশে থেকে দেখেছি কি অসাধারণ অবিচল থাকতে পারতেন যে কোনও ঘটনায়। ওনার কাছ থেকে সব সময় ভরসা পেতাম যা এককথায় অবর্ণনীয়, এই মূহুর্তে প্রণবদার মত সুদক্ষ প্রশাসক আর কেউ রইলেন না একথা বলাই যায়, যে কষ্ট করে তিনি উঠে এসেছেন বীরভুমের প্রত্যন্ত মিরিটি গ্রাম থেকে তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ভাবলে অবাক হতে হয়, একটা ছেলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময় তার বন্ধুর বাড়িতে নিজের জামা কাপড় রেখে আসতো বর্ষার সময়ে; কারণ ৫ কিমি দূরে কির্ণাহারের স্কুলে যেতে হতো গামছা পড়ে, সেই ডেডিকেশন ও অধ্যবসায়ের দ্বারাই সকল কষ্টকে  জয় করেই উনি ওই গ্রাম থেকে নিজেকে হাজির করতে পেরেছিলেন রাইসিনা হিলে। আজ ভারত একজন প্রকৃত রাজনৈতিক অভিভাবককে হারালো আর আমি আরও একবার পিতৃহারা হলাম এ কথা বলাই যায়।

One thought on “দ্বিতীয় বার পিতৃহারা হলাম

  1. ভীষণ আপ্লুত হলাম তোর লেখা পড়ে। দলের কাজে তুই এতটা সক্রিয় ছিলি জানতাম না রে। তোর আমার মতাদর্শ ভিন্ন হতে পারে কিন্তু তোর কোমল হৃদয়ের আঁচ পেয়ে তোর প্রতি সম্ভ্রম বেড়ে গেল, যখন তুই লিখলি “আমি আরও একবার পিতৃহারা হলাম ”। হোয়াটস্ এপ এ ছবি না এলেও তোর চোখের জল পরিস্কার দৃশ্যমান হল যেন।

    দল পার্টি রাজনীতির ঊর্ধে গিয়ে বলব এই যে, ব্যক্তিগতভাবে মানুষটার কোনো তুলনা হয় না। বাঙালির গর্ব। আজ ডিডি বাংলা নিউজে ওনার কিছু তথ্য পেলাম যা সাধারণ মানুষ এবার ধীরে ধীরে জানতে পারবে। উনি সত্যিই জনদরদী ছিলেন আর আত্মপ্রচারের বিরোধী ছিলেন। স্মৃতিশক্তি ছিল প্রবল। দেশের সর্বোচ্চ সম্মানগুলো পেয়েও অবিচল রেখেছিলেন নিজেকে। প্রতি বছর বীরভূমের ভিটেতে গিয়ে দূর্গাপূজার পৌরহিত্য করতেন। নিজে দেশের সম্রাট হয়েও আপনজনকে ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার মত গর্হিত কোনো কাজ করেননি তিনি।

    শ্রী প্রণব মুখার্জ্জীর প্রয়াণে এক নিষ্কলুষ, কর্তব্যনিষ্ঠ, দেশসেবী আর সর্বোপরি ব্যক্তিগত জীবনে সফল এক জ্যোতিষ্কের অবসান হল। ঈশ্বর ওনার আত্মাকে শান্তি দিক। 🌼🙏

Comments are closed.

error: Content is protected !!

Discover more from Sambad Pratikhan

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading