স্বরূপম চক্রবর্তী: শূন্য থেকে শুরু করে জয় ছিনিয়ে এনে নজির সৃষ্টি করল হুগলি জেলার চণ্ডীতলার বেগমপুর উত্তর আদানের ভিলেজ হেলথ কেয়ার মাল্টি ডিসিপ্লিনারী নার্সিং হোম, যার পরিচালনায় বেগমপুর রুরাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি রোটারী হেলথ সেন্টার। যে মানুষটি আজ থেকে ১১ বছর আগে দুটি কিডনি বিকল হয়ে তাঁর দিদির দেওয়া একটি কিডনির ওপর ভর করে পথ চলত এবং মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে নিজেকে সদা যুক্ত রাখতো, যে মানুষটি তার শরীরে বাসা বাঁধা ডায়ালেটেড কার্ডিও মায়োপ্যাথিকে হেলায় হারিয়ে এগিয়ে চলছিল নিজের অবিচল লক্ষ্যে সেই মানুষটাকেই সহসা কাবু করে ফেলেছিল এই মুহূর্তের সবথেকে ভয়ংকর মরণ ভাইরাস করোনা। সেই মানুষটি এই উত্তর আদানের ভিলেজ হেলথ কেয়ার মাল্টি ডিসিপ্লিনারী নার্সিং হোমের পরিচালনায় ছিলেন সদা জাগ্রত একজন সৈনিক। গ্রামীণ এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনার প্রধান ব্যবস্থাপক যখন করোনায় আক্রান্ত হলেন তখন এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক মণ্ডলীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হুগলির প্রত্যন্ত এই গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে সম্পুর্ন আলাদা ভাবে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা করে, আইসোলেটেড আইসিইউ তৈরি করে ভিলেজ হেলথ কেয়ার তাঁদের ব্যবস্থাপকের চিকিত্সার জন্য। নিজে বাঙালি না হয়েও গ্রামবাংলার বুকে স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রায় সকল সুবিধাযুক্ত নার্সিং হোমটিকে আপন করে নেওয়া ব্যবস্থাপক পার্থ রাওকে করোনা রোগ থেকে সুস্থ করে তুলে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে বদ্ধ পরিকর ছিলেন এখনকার সকল পরিচালকবৃন্দ ও এই ভিলেজ হেলথ কেয়ারের সকল ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। ভিলেজ হেলথ কেয়ারের প্রধান ব্যবস্থাপক বা ম্যানেজার পার্থবাবুকে সুস্থ করে তুলতে সকল রকম ভাবে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন এখনকার কর্তৃপক্ষ।
এই ভিলেজ হেলথ কেয়ারের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ স্থানীয় যুবক কৌশিক শীল জানাচ্ছিলেন কিভাবে তারা সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সে কৃত্রিম উপায়ে তাঁদের ভিলেজ হেলথ কেয়ার থেকে চণ্ডীতলা হাসপাতালে পার্থবাবুকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে তাঁর ন্যাজাল সোয়াব পরীক্ষা করিয়ে নিয়ে আসেন। কৌশিকবাবু সহ এখনকার সকল ডাক্তার,নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও সকল পরিচালকবৃন্দের আন্তরিক প্রচেষ্টায় করোনাকে জয় করে ফিরে এসেছেন ভিলেজ হেলথ কেয়ারের ব্যবস্থাপক পার্থ রাও। আজ যখন সারা দেশের বড় বড় নার্সিং হোম থেকে শুরু করে হাসপাতালগুলি যদি এই গ্রামীণ হাসপাতালটির আন্তরিকতা থেকে সামান্যতম শিক্ষা গ্রহণ করে তাহলে আমাদের দেশে আর কোনও রোগীকে আমাদের হারাতে হবে না। আমরা শহুরে মানুষজন আজও কিছুটা হলেও অবজ্ঞার চোখে দেখি বা ভরসা করতে পারি না আমাদের গ্রামীণ স্বাস্থ্যপরিষেবা প্রদানকারী নার্সিং হোম বা হাসপাতালগুলিকে, সেখানে ভিলেজ হেলথ কেয়ারের পার্থ বাবুর মত এক রোগী যার শরীরে বাসা বেঁধে আছে এমন রোগ যাঁকে করোনা সহজেই কাবু করে ফেলতে পারে, তাঁকে সুস্থ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে পশ্চিমবঙ্গ তথা সারা ভারতের মধ্যে এক অনন্য নজির স্থাপন করল ভিলেজ হেলথ কেয়ার।
তাঁদের এই সফলতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে কৌশিক শীল কৃতজ্ঞতা জানালেন এখনকার ডাঃ সলিল নস্কর, ডাঃ তমাল হাজরা, ডাঃ সম্পদ বড়ালদের নেতৃত্বে সকল ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। আসলে এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে আমরা যদি আমাদের লক্ষ্যে অবিচল থেকে সঠিক পথে সঠিকভাবে এগিয়ে চলতে পারি তাহলে একদিন না একদিন সকল নিন্দুকের নিন্দার প্রকৃত জবাব আমরা দিতে পারব, আর হুগলি জেলার বেগমপুরের উত্তর আদানের এই ভিলেজ হেলথ কেয়ারের নিন্দুকের দল আজ লুকিয়ে পড়েছে অন্তরালে কারণ কৌশিক বাবুদের মত সদা জাগ্রত মানুষগুলির অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল আজকের এই সফলতায়।