Site icon Sambad Pratikhan

এরাই আমাদের বন্ধু এঁদের রক্ষা করুন

Advertisements

সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়ঃ জীবজগতের সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। আমাদের জ্ঞানের কোনও সীমাবদ্ধতা নেই। তাও আমরা সদাসচেষ্ট নিজেদের জ্ঞানের পরিধি বিস্তারে। একটু চেষ্টা করলেই আমরা আমাদের সেই জ্ঞানের পরিধি বিস্তারে সক্ষম হই। এত কিছু স্বত্তেও আমাদের জীবন নানা ভূলে ভরা। জীবনে চলার পথে আমরা প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু ভূল করেই থাকি, আর সেই সকল ভূল থেকেই আমরা প্রত্যেকদিন শিক্ষালাভ করি। আসলে এই পৃথিবীর জীবকুলে আমরা মানুষেরা নিজেরাই নিজেদের পিঠ চাপড়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছি। আসলে কি আমরা নিজেরা সত্যি সত্যিই জীবকুলের শ্রেষ্ঠ প্রাণী? আমরা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য নিরীহ প্রাণীদের জীবন নিতে এতটুকুও পিছপা হই না। এর ফলস্বরূপ আমাদের মনে বিন্দুমাত্র পাপবোধ জন্মায় না, বরঞ্চ আমরা আমাদের ওই সকল নৃশংস কাজগুলির পক্ষে নানা অযৌক্তিকর যুক্তি খাড়া করে নিজেরা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করি। এতকিছুর অবতারনা যে কারণে সেই মূল বিষয়ে আলোকপাত করা যাক। সম্প্রতি কয়েকমাস আগে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নার্স হোস্টেল চত্বরে ১৬টি নিরীহ কুকুরছানাদের পিটিয়ে মারার পর নানা নামী-দামী পশুপ্রেমী সংগঠন নিন্দায় সোচ্চার হয়ে ওঠে। রীতিমত ঝড় ওঠে সামাজিকও মাধ্যমে। আবার যে কে সেই, আসলে আমরা মানুষেরা সকল বিষয়কে খুব তাড়াতাড়ি আমাদের মন থেকে মুছে ফেলে নিত্য নতুন বিষয় নিয়ে নিজেদের সমালোচক হিসাবে সাজাতে বড্ড বেশি ভালবাসি। আসলে যখন কোনও ঘটনা ঘটে তার পর থেকে কয়েকটা দিন বা কিছু মাস আমরা সেই বিষয়টিকে নিয়ে বড্ড বেশি নাড়াচাড়া করি বা করতে ভালবাসি। যেমন ধরা যাক নীলরতন সরকার হাসপাতালের কুকুর ছানাগুলিকে পিটিয়ে মারার ঘটনা। যে সকল মানুষগুলি বা যে সকল সংগঠনগুলি সেই সময়ে সামাজিক মাধ্যমে ও বিভিন্ন মাধ্যমে নিজেদের জাহির করার খেলায় মেতে উঠেছিলেন, সেই সকল মানুষগুলিও নিজেদের অজ্ঞাতে নানা নিরীহ প্রাণীদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার করেই থাকেন। দেখা যায় দোল বা দীপাবলীর আনন্দে মেতে উঠে নানা মানুষ পথের কুকুরদের ওপর নিজেদের বীরত্ব প্রমাণে তত্‍পর হয়ে ওঠেন। আমাদের সমাজে নানান পশু-প্রাণীর মধ্যে সবথেকে প্রভুভক্ত প্রাণী বা জীব হচ্ছে কুকুর। পশু-পাখির প্রতি আমাদের ভালোবাসা, দায়বদ্ধতা আমাদের সমাজে সেই প্রাচীন কাল থেকেই বহমান। মানুষের সবথেকে কাছের, সবথেকে প্রিয় প্রাণী হিসাবে নিজেদের স্থান পাকা করে নিয়েছে কুকুর নামক প্রাণী। আজকে আমাদের সমাজে “মানুষের প্রকৃত বন্ধু”(Man’s Best Friend) হিসাবে কুকুর নিজেদের স্থান করে নিয়েছে। তবুও আমাদের বর্তমান সমাজের তথাকথিত সভ্য জনগণ(যাঁরা নিজেদের সভ্য বলে প্রচার করেন ও মনে করেন)এই বিষয়টি মানতে নারাজ। এতক্ষণ যা আলোচনা করা হলো তা সবটাই তাত্বিক আলোচনা। এবার আসা যাক প্রকৃত একটি ঘটনার বিষয়ে। আমাদের রাজ্যের কলকাতার উপকণ্ঠে মহেশতলা থানার মহেশতলা পৌরসভার অন্তর্গত জিনজিরা বাজার এলাকার বান্দাল পাড়ার একটি ঘটনায়।

আক্ষরিক অর্থে পশুপ্রেমী একজন মানুষ যিনি তাঁর এলাকার ৮-১০টি পথ কুকুরদের নিয়ম করে প্রতিদিন দুবেলা খাবার দেন, আর ঠিক এই থেকেই প্রকৃত সমস্যার সূত্রপাত। ওই পল্লীর অধিকাংশ মানুষের বক্তব্য যেহেতু ওই পশুপ্রেমী মানুষটি প্রতিদিন ওই সকল রাস্তার কুকুরদের আদর করে খাবার দেন তাই ওই সকল রাস্তার কুকুররা রাস্তায় যত্র-তত্র মল-মুত্র ত্যাগ করে এলাকাকে নোংরা করছে, আর যেহেতু ওই মানুষটি ওই কটি রাস্তার কুকুরদের ভালবেসে খাবার দেন তাই তিনিই মূল দোষী এইভাবে এলাকা নোংরা হবার জন্য বলে ওই অঞ্চলের কিছু মানুষ রীতিমত ওই ব্যক্তিকে শাসিয়ে তাঁর ওপর চড়াও হন। এই বিষয়ে ওই মানুষটি তাঁর এলাকার বিশেষ কিছু মানুষের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন ও ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা জানিয়ে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে যোগাযোগ করলে সংশ্লিষ্ট ফাঁড়ি থেকে তাঁকে বলা হয়, ‘জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ’ সব কাজই কি পুলিশ করবে, আর ওই সকল রাস্তার কুকুরদের কি কারণে তিনি খাবার দেন, খাবার না দিলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আসলে আমাদের দেশের আইন কিন্তু অন্য কথা বলে। পশু সুরক্ষা আইন অনুসারে নিরীহ রাস্তার কুকুরদের উপযুক্ত লালন-পালন ও সেবা একটি মহত্‍ কাজ, এছাড়াও কোনও প্রকার অবলা প্রাণীকে শারীরিক আঘাত করলে ভারতীয় সংবিধানের ৪২৮ নং ধারা অনুযায়ী ওই ব্যক্তির সব্বোর্চ্চ ২৫০০ টাকা জরিমানা ও কমপক্ষে ৩ বছরের সশ্রম কারাদন্ড বাধ্যতামূলক এবং এই সকল কেসে পুলিশ কোনও রকম গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারে। পথ কুকুরদের সংখ্যাবৃদ্ধি কমাতে কুকুরদের বন্ধ্যাত্বকরণ প্রক্রিয়া চালু আছে এবং এলাকার সকলে মিলে স্থানীয় পৌরসভায় এই বিষয়ে যোগাযোগ করলে পৌরসভা এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। পশুপ্রেমী ওই মানুষটি তাঁর এলাকার ১২নং ওয়ার্ডের পুরপিতার কাছে বিষয়টি উত্থাপন করলে পুরপিতা হরমোহন প্রামানিক এই বিষয়ে জনসচেতনেতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সংগঠন ও ক্লাবগুলিকে দায়িত্ব দিচ্ছেন এবং অবলা প্রাণীদের প্রতি সকল রকম অত্যাচার বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে আগামীতে বেশ কিছু পদক্ষেপ তাঁরা গ্রহণ করবেন বলে জানান। বিষয়টি নিয়ে পশুপ্রেমী ওই মানুষটি স্থানীয় মহেশতলা পৌরসভার পৌরপ্রধান ও স্থানীয় বিধায়ক দুলাল চন্দ্র দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে দুলাল বাবু ওনাকে জানান বিগত বাম আমলে এই এলাকার কোন রকম উন্নতিই হয় নি, তাঁরা ক্ষমতা আসার পর থেকে এই এলাকায় উন্নতির কাজ হচ্ছে ব্যাপক হারে। রাস্তার কুকুরদের নির্বিজকরণ ও তাদের উপযুক্ত ভ্যাক্সিন দেওয়া নিয়ে তাঁরাও ভাবছেন এবং খুব তাড়াতাড়িই তাঁরা এই বিষয়ে কাজ শুরু করবেন বলেও জানান।

কিছুই নয় পৌরসভা একটু সচেতন হলেই এই সকল রাস্তার কুকুরদের বংশবৃদ্ধি রোধে তাদের নিবির্জকরণ এবং তাদের উপযুক্ত ভ্যাক্সিন দিয়ে এলাকায় কুকুরদের নিরাপত্তা ও সকল মানুষজনদের  নিরাপদে চলাচল ও বসবাসের উপযুক্ত করে তুলতে পারবে। শুধুমাত্র কোন এলাকায় কিছু রাস্তার কুকুরদের প্রতি কিছু মানুষের অমানবিকতার ফলে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে কয়েকদিন বাজার গরম না করে সকল মিলে একটু সদয় হতেই পারি আমাদের সবথেকে কাছের, সবথেকে প্রিয়, সবথেকে উপকারী এই সকল সারমেয়কুলের প্রতি। তবেই লাভ এই সমাজের। প্রকৃত অর্থে স্বামিজী’র বাণী “জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর” পাথেয় করে এগিয়ে চলতে পারলেই মঙ্গল। (ছবি নিজস্ব)

Exit mobile version