ঘণ্টা বাঁধবে কে!!!

কেন  রেহাই মিছিলে সামিল হওয়া হেলমেট বিহীন  চালকদের !!!

helmet-1স্বরূপম চক্রবর্তীঃ  আমাদের দেশে যান চলাচল সংক্রান্ত যে সকল নিয়ম-কানুন চালু আছে তার মধ্যে অন্যতম নিয়ম দুই চাকার যানচালক ও তাঁর আরোহীকে অতি অবশ্যই সুরক্ষা শিরস্ত্রাণ পড়তে হবে বাইক বা স্কুটার চালানোর সময়ে। অন্যথায় সেই বাইক বা স্কুটার চালকের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত আইননানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। তবে যে বিষয়ের জন্য এই লেখার শুরু তা হলো, আইন তো আছে কিন্তু সেই আইনকে মানছি আমরা কতজন, বা কতটা মান্যতা দিচ্ছি আমরা সেই আইনকে। আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সারা রাজ্যে সুরক্ষিত ভাবে যান চলাচলের জন্য ‘সেভ ড্রাইভ-সেভ লাইফ’ শীর্ষক যে কর্মসুচী গ্রহণ করা হয়েছিল তার কল্যাণে হয়তো বা আমাদের রাজ্যে পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেকটাই কমানো গেছে, সে বিষয়ে অতিবড় নিন্দুকও স্বীকার করতে বাধ্য। তবে কেন এই লেখার অবতারণা। কারণ কি? এই প্রশ্ন উঠে আসতেই পারে। আসলে আমরা নিজেদের যেভাবে শিক্ষিত বলে জাহির করি আমরা কি সত্যিই ততটা শিক্ষিত হতে পেরেছি, নাকি সব জেনে-বুঝে নিজেরা আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছি। সচেতনতা ঠিক কি জিনিস তাই এখনো আমরা বুঝে উঠতে পারি নি, তাই এখনো এই রাজ্যের অনেক যায়গায় প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে আমরা আমাদের আধুনিক দ্বি-চক্র যানে সুরক্ষা শিরস্ত্রাণ না পরেই নিজেদের বীরত্ব দেখাই। এই ছবি সারা ভারতের অধিকাংশ শহরের, বিশেষ করে আমাদের রাজ্যের আধা শহর ও গ্রামের নিত্য দেখতে পাওয়া চিত্র। সব দেখে শুনেও ওই সকল এলাকার স্থানীয় প্রশাসন গান্ধারীর মত অন্ধ স্নেহে এই সকল স্ব-শিক্ষিত মানুষগুলিকে সকল নিয়মের, সকল আইনের বেড়াজাল থেকে মুক্ত রাখেন তা এই অবোধ কলমচির বোধগম্য নয়। তবে মাঝে মাঝে এই সকল স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু লোক দেখানো কিছু ধরপাকড় হয়। কিন্তু তা নামেই। আসলে আমরা সব জেনে বুঝেও নিজেরাই সচেতন নই, নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছি আমরা সতত।

এ প্রসঙ্গে একটি বিষয়ে আলোকপাত করা অতি প্রয়োজনীয়, আমাদের দেশের সকল আইন-কানুনের উর্দ্ধে রাজপথে যে কোন রকম রাজনৈতিক বা ধর্মীয় মিছিলে অংশ নেওয়া সকল বাইক/স্কুটারের চালক ও তাদের সহ সঙ্গীরা। এটা আমরা দেখে দেখে অভস্ত্য যে এই সকল মিছিলে সামিল হওয়া বাইক বাহিনীর সকলকে বিনা সুরক্ষা শিরস্ত্রাণ ছাড়াই। আর ঠিক কী কারণে এই সকল মিছিলে অংশ নেওয়া বাইক বাহিনীর প্রত্যেককে প্রশাসন ছাড় দেন জরিমানা থেকে তা বোধগম্য নয়। বলতে পারেন কেন, কী কারণে এনারা আইনের হাত থেকে রেহাই পাবেন! কী জন্য এই বেনিয়মে প্রচ্ছন্ন মদত থাকে প্রশাসনের! নাকি এই সকল মিছিলে সামিল হওয়া বাইক বাহিনীর জন্য প্রশাসনের বিশেষ ছাড়পত্র থাকে, নাকি আগামীর জনমত থেকে নিজেদের বঞ্চিত হবার ভয়ে? এর উত্তর কে দেবে? বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? আইন তো সকলের জন্য সমান, তাহলে কেন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মিছিলে অংশ নেওয়া এই সকল বাইক বাহিনী’র ক্ষেত্রে অন্য নিয়ম প্রযোজ্য, সেটা আমরা ভাবি কি? অবিলম্বে এই সকল মিছিলে অংশ নেওয়া সকল বাইক আরোহীদের মাথায় মিছিলে চলা কালীন হেলমেট পর বাধ্যতামূলক করা হোক, সুরক্ষা এবং আইনের স্বার্থে। প্রয়োজনে প্রশাসন ও পুলিশকে আরও কড়া মনোভাব নিতে হবে এই বিষয়ে। দরকার হলে সেই সকল মিছিলের অনুমতি প্রদানের আগে মিছিলের আয়োজক রাজনৈতিক বা ধর্মীয় সংগঠনগুলিকে মুচলেখা দিতে বাধ্য করা হোক হেলমেট পড়ার বিষয়ে। এখন প্রশ্ন এই নিয়ম কি আদৌ কড়া সম্ভবপর, নাকি এই কলমচির অধুরা স্বপ্ন হিসাবে থাকবে। যদিও সম্প্রতি এই বিষয়ে ভারতের বেশ কিছু শহরে আইনের কড়াকড়ি হয়েছে, তথাপি তা কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে সেটাই দেখার। নাকি আবারও সেই কথাটার পুনরাবৃত্তি হবে-‘সত্য সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ’

 

error: Content is protected !!

Discover more from Sambad Pratikhan

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading