স্বরূপম চক্রবর্তীঃ সাড়াফুলি বা শেওড়াফুলির রাজ পরিবারের দোল উত্সবের প্রধান অঙ্গ এই পরিবারের কুলদেবতা শ্রী শ্রী কৃষ্ণদেব জিউ এর দোল উৎসব। রাজ পরিবারের রীতি মেনে আজও সমানভাবে চলে আসছে এই পরিবারের এই উত্সব। শেওড়াফুলির রাজাদের আদি নিবাস ছিল বর্ধমান এর পাটুলিতে। পাটুলি থেকেই রাজা বাসুদেব রায় আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর আগে শেওড়াফুলির এই কাছারি বাড়ি যা বর্তমানে শেওড়াফুলির রাজবাড়ি নামে খ্যাত, সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন তাঁদের কুলদেবতা শ্রী শ্রী কৃষ্ণদেব জিউ এর মূর্তি। পাটুলির রাজবাড়ি আজ ইতিহাস, তাঁদের বসতবাড়ি, সংলগ্ন দেবালয় সকল কিছুই আজ ভাগরথীর গর্ভে। তবুও পরিবারের সকল ধর্মীয় রীতি-নীতি আজও সমান ভাবে পালন করে চলেছেন এই রাজ পরিবারের বর্তমান বংশধরেরা। এই বংশের বর্তমান পুরুষ বড়তরফের পক্ষে আশীষ ঘোষ জানাচ্ছিলেন তাঁদের পরিবারের দোল উত্সবের কথা।
তাঁর কোথায় উঠে এল নিয়ম মেনে তাঁরা আজও দোলের আগের দিন তাঁদের কুলদেবতার মন্দিরে পূজাচ্চনার মধ্য দিয়ে চাঁচর পুড়িয়ে, তাঁদের কুলদেবতাকে নগর প্রদক্ষিন করিয়ে এবং সর্বোপরি এই পরিবারের অন্যতম ধার্মিক রাজা রাজা হরিশ্চন্দ্র রায়ের প্রতিষ্ঠা করা শেওড়াফুলির গঙ্গার পারে মা নিস্তারিণী কালী মন্দিরে এই মন্দিরে কৃষ্ণদেবকে নিয়েও চাঁচর উৎসব করেন। শেওড়াফুলি রাজপরিবারে বংশধরের উপস্থিতিতে পরিবারের মন্দিরের পূজারীরা কোলে করে ওনাকে প্রদক্ষিণ করিয়ে আবার মন্দির গৃহে ফিরিয়ে নিয়ে যান। আজ যথারীতি সকল নিয়ম মেনে এখনকার রাজ পরিবারের সদস্যরা তাঁদের কুলদেবতা কৃষ্ণদেব জিউকে দোলায় চাপিয়ে তাঁদের দেবোত্তর এস্টেট সংলগ্ন রাজমথে নিয়ে যান এবং ন্যাড়াপোড়া বা চাঁচর অনুষ্ঠিত হবার পর ফিরিয়ে নিয়ে আসেন মূল মন্দিরে। আশীষ বাবু জানাচ্ছিলেন আগামীকাল দোলের দিন সকালে কুলদেবতাকে প্রণাম করে তাঁদের পরিবারে দোল খেলার উত্সব পালন করা হয়, এবং এই নিয়ম তাঁরা বংশ পরম্পরায় পালন করে চলেছেন। আজ এই পরিবারের এই চাঁচর উত্সব উপলক্ষে স্থানীয় মানুষজনের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। যে বিষয়টি বিশেষ উল্লেখযোগ্য সেটি এই পরিবারের কুলদেবতা কৃষ্ণদেব জিউ’র সঙ্গে রাধা’র কোনও বিগ্রহ দেখা যায় না। এই বিষয়ে আশীষ বাবু জানলেন তাঁরা তাঁদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে জেনেছেন ও তাঁদের পরিবারের বিভিন্ন পুঁথি ঘেঁটে যা তথ্য পেয়েছেন সেটা এই রকম-শেওড়াফুলিতে যখন এই বিগ্রহ আচার অনুষ্ঠান করে প্রতিষ্ঠিত করা হয় সে সময় রাধার বিগ্রহ পাশে রাখা হয়েছিল, কিন্তু পরের দিন ভোরে নিস্তারিণী মন্দিরের ভাগীরথীর ঘাটের সিঁড়িতে ওনাকে দেখতে পাওয়া যায় এবং তার পর থেকেই তাঁদের পরিবারের কুলদেবতার মূর্তির সঙ্গে থাকেন না রাধা’র কোনও মূর্তি। (নিজস্ব চিত্র)