একদা যা ছিলো গ্রীক উপনিবেশ আজ তা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম শিল্পনগরী। কথা বলছি পশ্চিমবঙ্গের শিল্পাঞ্চল রিষড়া নিয়ে। রাজ্যের অন্যতম জেলা হুগলি, হুগলি জেলার চন্দননগর বিখ্যাত তার জগদ্ধাত্রী পূজার জন্য। রিষড়াও কিন্তু চন্দননগরের থেকে কোনও অংশে পিছিয়ে নেই মা জগদ্ধাত্রীর আরাধনায়। রীতিমত চন্দননগরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মিনি ভারত হিসাবে খ্যাত রিষড়া আজ সারা বাংলার দর্শকের কাছে সমীহ আদায় করে নিয়েছে তার জগদ্ধাত্রী আরাধনার কারণে। প্রাচীন রিষড়ায় আজ থেকে প্রায় একশত বত্সর আগে রিষড়ার দেওয়ানজি স্ট্রিটের ভট্টাচার্য পরিবারে শুরু হওয়া জগদ্ধাত্রী পুজো থেকে আজ সারা রিষড়ার রেল লাইনের দুই পার মিলিয়ে প্রায় ৮৫ টি পুজো হচ্ছে এই বছর। এর মধ্যে রিষড়া কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটির অধীনে পুজো রয়েছে প্রায় ৫২ টি। যদিও চন্দননগরের মতো রিষড়ায় চারদিনের পুজো না হলেও, নবমীতেই চারদিনের পুজো অনুষ্ঠিত হয় এখানে।
নবমী থেকে শুরু হওয়া পুজোর পরিসমাপ্তি ঘটে চার দিন বাদে। এই বছর ২৯ অক্টোবর শুরু হয়ে রিষড়ার জগদ্ধাত্রী উত্সব শেষ হচ্ছে ২ নভেম্বর। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে রিষড়ার জগদ্ধাত্রী পুজোতেও এসেছে থিমের ছোঁয়া। হুগলি জেলার আলোকসজ্জার ঐতিহ্যকে সামনে রেখে রিষড়াও এই কদিন সেজে ওঠে হরেক রকম থিমের আলোকমালয়, এবং এই বিষয়টিতেও তারা সমানে টেক্কা দিতে প্রস্তুত চন্দননগরের সঙ্গে। বলাই যায় বর্তমানে রিষড়ার জগদ্ধাত্রী আরাধনা আজ সারা পশ্চিমবঙ্গে নদিয়ার কৃষনগর ও হুগলির চন্দননগরের সঙ্গে এক সারিতে আলোচিত ও প্রশংশিত। রিষড়া কেন্দ্রীয় পুজো কমিটির পক্ষে ইন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানালেন রিষড়া শুধুমাত্র শিল্পনগরী নয়, রিষড়ার বুকে রয়েছে বেশ কিছু প্রাচীন দ্রষ্টব্য। তিনি আরও জানালেন তারা কেন্দ্রীয় পুজো কমিটির পক্ষে সকল পুজো কমিটি গুলিকে বিশেষ সহায়তা প্রদান করেন পুজোর সকল নিয়মকানুন মেনে চলতে। এছাড়াও জগদ্ধাত্রী পুজোর কদিন রিষড়ায় আগত দর্শকদের যাতে কোনওরকম অসুবিধা না হয় সে দিকেও তারা বিশেষ নজর রাখেন রিষড়া পুরসভা ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে।
রিষড়ার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পুজোর মধ্যে পার্ক তরুণ দল, লেনিন মাঠ, ব্রহ্মানন্দ মাঠ, হরিসভা যুব গোষ্ঠী, চারবাতি ইয়ং স্টার, অঙ্কুর, কোরাস, লক্ষীপল্লী সর্বজনীন, রবীন্দ্র সংঘ, অনাথ আশ্রম, পার্ক সম্মিলনী প্রধান। থিমের পুজোয় এবছর পার্ক তরুণ দলের থিম নীল পরীর দেশে। কমিটির পক্ষে রূপম বসু জানালেন তাদের থিম মোবাইল সহ নানা ইলেকট্রনিক সামগ্রীর ব্যাপক ব্যবহার থেকে বিরত রেখে কিছুটা সময় মানুষ কে একটু অন্য স্বপ্নীল জগতে নিয়ে যাবার। আগামী কদিন গঙ্গাপারের এই শিল্পাঞ্চল মিনি ভারতে সারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে দর্শকের ব্যাপক আগমন ঘটবে তা সহজেই অনুমেয়।